চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদ্রাসা) নিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে উসকানিমূলক ফেসবুক ছবি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সুন্নি ও কওমি আকিদার অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই ঘটনায় অন্তত ৭০ জন আহত হন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৬০ জনের বেশি আহত হয়ে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তবে সবাই আশঙ্কামুক্ত। সংঘর্ষ চলাকালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এতে হাটহাজারী এলাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবক আরিয়ান ইব্রাহিম (২০) নিজের ফেসবুক আইডিতে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে অবমাননাকর অঙ্গভঙ্গি করে ছবি পোস্ট করেন। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কওমি মহলে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফটিকছড়ি থানার পুলিশ পৌর সদর থেকে আরিয়ানকে আটক করে। আটক ইব্রাহিম ভিডিও বার্তায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ফটিকছড়ি থানার ওসি নূর আহমেদ বলেন, “তাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, আরিয়ান ইব্রাহিমের ফেসবুক আইডিতে ফটিকছড়ি পৌরসভা ছাত্রদলের নেতা পরিচয় থাকলেও, সংগঠনের সভাপতি একরাম উল্লাহ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, “সে ছাত্রদলের কেউ নয়।” একই সঙ্গে প্রশাসনকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার রাত ১০টা থেকে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টা পর্যন্ত হাটহাজারী সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন। জারিকৃত আদেশে বলা হয়, মীরের হাট থেকে এগারো মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত রাস্তাসংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল, অস্ত্র বহন ও পাঁচজনের বেশি লোকের একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ।
প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।