ঢাকার রূপনগরে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ছিল কাঠামোগত দুর্বলতা ও অবহেলা। এমনটাই উঠে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ভবনটির কাঠামো, নির্মাণ প্রক্রিয়া ও ব্যবহৃত উপকরণ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল প্রায় অনুপস্থিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনটি নির্মাণে কোনো প্রকৌশলগত পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়নি। ছিল না যথাযথ অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথ কিংবা অগ্নি প্রতিরোধক উপকরণ। ফলে আগুন লাগার পর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ে।
আইপিডির গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ভবনটির নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ ছিল নিম্নমানের এবং কাঠামোগতভাবে দুর্বল। ভবনের ভেতরে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার, বৈদ্যুতিক তারের জটলা এবং অপ্রতুল বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা যা আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনটি ছিল একটি ‘মাল্টি-ফাংশনাল’ স্থাপনা যেখানে একইসঙ্গে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও গুদাম হিসেবে ব্যবহার চলছিল। এতে করে ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভবন ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের সরকারি তদারকি ছিল না।
আইপিডির গবেষকরা মনে করেন, এই অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি শহরের অব্যবস্থাপনা, দুর্বল নীতিমালা ও নজরদারির অভাবের প্রতিফলন। তারা বলেন, “এটি একটি কাঠামোগত ও অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভবনটির মালিক, নির্মাতা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। কেউই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ছিল না। ফলে দুর্ঘটনার পরও দায় এড়ানোর প্রবণতা দেখা গেছে।
আইপিডি সুপারিশ করেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে ভবন নির্মাণে অনুমোদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বাধ্যতামূলক বাস্তবায়ন জরুরি।
তারা আরও বলেছে, “শুধু তদন্ত নয়, বরং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি সমন্বিত নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।”
এই প্রতিবেদনটি নগর পরিকল্পনা, আবাসন নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এটি দেখিয়ে দেয়, অবহেলা ও দুর্বল নীতির ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে।