রাজধানীর মাঠ-পার্ক ও গণপরিসরগুলো দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা, দখল ও অবহেলায় জর্জরিত। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের পেছনের পার্ক কিংবা বারিধারা জে ব্লক পার্ক—সবই এখন বেদখল বা অযত্নে পড়ে আছে। অথচ ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাড়ির সামনে দ্রুতগতিতে নির্মাণ হচ্ছে পার্ক, লাইব্রেরি ও সংযোগ সড়ক।
মোহাম্মদপুর টাউন হলের পার্কটি একসময় এলাকাবাসীর দাবিতে জনপরিসর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সাবেক মেয়র আনিসুল হক ও আতিকুল ইসলাম পার্কটির সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর জায়গাটি আবার জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে চলে যায় এবং সেখানে আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়।
বারিধারা জে ব্লক পার্ক বহু বছর ধরে অযত্নে পড়ে আছে। শিশুদের খেলার জায়গা হয়ে উঠেছে ট্রাক-রিকশার গ্যারেজ। ধুলো ও বায়ুদূষণে স্থানীয়রা নাকাল।
অন্যদিকে প্রশাসক এজাজের বাড়ির সামনে স্কুল উচ্ছেদ করে সেখানে পার্ক ও লাইব্রেরি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল সড়ক থেকে বাড়িতে সরাসরি প্রবেশের জন্য নতুন সংযোগ সড়কও দ্রুতগতিতে তৈরি হচ্ছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, প্রশাসকের বাসার সামনে কাজ হওয়ায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেছেন, অন্য এলাকায় পার্ক-মাঠ বেহাল পড়ে থাকলেও প্রশাসকের বাসার সামনে দ্রুত উন্নয়ন সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতার সুবিধাগ্রহণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির মন্তব্য করেছেন, একজন পরিবেশকর্মী প্রশাসক হিসেবে এজাজের কাছ থেকে জনপরিসর উন্মুক্ত করার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তিনি নগরবাসীকে হতাশ করেছেন। নিজের বাড়ির সামনে পার্ক ও রাস্তা দ্রুত নির্মাণ দৃষ্টিকটু।
রাজধানীর বিভিন্ন মাঠ-পার্ক ক্লাব, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে। বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি পার্ক ‘বনানী স্পোর্টস এরেনা’ ক্লাবের দখলে, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের’ দখলে। রামপুরা মাঠে খেলতে গেলে শিশুদের মারধর পর্যন্ত করা হয়। ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যান বহু বছর ধরে বন্ধ। কারওয়ান বাজারের পার্ক বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
রাজধানীর মাঠ-পার্কগুলো জনস্বার্থে উন্মুক্ত রাখার পরিবর্তে দখল, বাণিজ্যিক ব্যবহার ও অবহেলায় জর্জরিত। অথচ প্রশাসকের বাড়ির সামনে দ্রুত উন্নয়ন নগরবাসীর কাছে বৈষম্যের প্রতীক হয়ে উঠছে। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, একজন দায়িত্বশীল প্রশাসক হলে নিজের বাড়ির সামনে কাজকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য এলাকার মাঠ-পার্কগুলো আগে উন্নয়ন করা উচিত ছিল।