প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে মধ্যরাতে চালানো হামলা শুধু দুটি সংবাদপত্রের ওপর আক্রমণ নয় এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের ওপর সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম এমন নজিরবিহীন হামলা প্রমাণ করে, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আজ আর সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না বা দিতে চাইছে না।
একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্র ভাঙচুর মানে সত্য ভাঙচুর। আগুনে পুড়ে যাওয়া কাগজপত্র, লুট হয়ে যাওয়া ক্যামেরা, ছাদে আটকে পড়া সাংবাদিকদের মৃত্যুভয় এসব কেবল ভয়াবহ দৃশ্য নয়, এগুলো ইউনূস সরকারের ব্যর্থতার দলিল। আরও উদ্বেগজনক হলো, হামলার পর একাধিক দিন পার হলেও মামলা হয়নি, গ্রেপ্তারও নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তা কার্যত হামলাকারীদের দায়মুক্তির বার্তা দিচ্ছে।
সরকার জানতো ঝুঁকি আছে। হামলার আশঙ্কায় সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষ আগেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু পুলিশ, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতি আসার আগেই আগুন জ্বলে ওঠে। প্রশ্ন উঠতেই পারে এটি কি কেবল অদক্ষতা, নাকি ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা?
এই হামলা বিচ্ছিন্ন নয়। টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্র, সংস্কৃতিকেন্দ্র- সবখানেই একসঙ্গে আঘাত এসেছে। এটি সংগঠিত সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসের একটি ধারাবাহিক রূপ, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা উসকে দিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে অগ্রসর করতে চায়। অথচ ইউনূস সরকার এখনো একে ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’ বলে চালিয়ে দিতে চায় যেন সংঘবদ্ধ সন্ত্রাস ও সহিংসতা কোনো স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, সাংবাদিকদের জীবননাশের ঝুঁকি নিয়েও কেউ দায় নিচ্ছে না। ছাদে আটকে থাকা কর্মীরা যদি মারা যেতেন, দায় কার হতো? সেই প্রশ্নের উত্তর সরকার এখনো দেয়নি।
সংবাদপত্র কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন নয়। তারা প্রশ্ন করে, তথ্য দেয়, ক্ষমতাকে জবাবদিহির মুখে দাঁড় করায়। সেই কাজের মূল্য যদি আগুন ও লুটপাট হয়, তাহলে এ রাষ্ট্রে আর কার নিরাপত্তা আছে?
আজ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কাল যে কোনো কণ্ঠ। গণমাধ্যমকে রক্ষা না করলে গণতন্ত্র থাকে না। বিবৃতি, আশ্বাস বা ফোনকল যথেষ্ট নয় কারণ ইউনূস সরকারের নখদন্তহীন বিবৃতি দেখতে দেখতে জনগণ একপ্রকার শ্রান্ত। অবিলম্বে হামলাকারী ও তাদের ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে ইতিহাস এই সময়কে মনে রাখবে এভাবে যে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই রাষ্ট্রের আয়নায় আগুন লাগিয়েছিল।