সর্বশেষ

মতামত

চাইনিজ রাইফেল নয়, ঢাল-লাঠি হাতে ডিউটিতে যেতে চান ডিএমপির পুলিশ সদস্যরা

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৩
চাইনিজ রাইফেল নয়, ঢাল-লাঠি হাতে ডিউটিতে যেতে চান ডিএমপির পুলিশ সদস্যরা

রাজধানীর রাজপথে আজ এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। তবে এই নিস্তব্ধতা কেবল যানজট বা রাজনৈতিক উত্তেজনার নয় এটি পুলিশের অন্তর্গত এক নীরব প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি। রাজনৈতিক সমাবেশ বা বিক্ষোভ প্রতিহত করতে চাইনিজ রাইফেল কিংবা শটগানের মতো ভারী অস্ত্র হাতে নিতে আর আগ্রহী নন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বহু কনস্টেবল। তাদের কণ্ঠে একটাই কথা, “অস্ত্র নয়, আমাদের প্রয়োজন ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা।”

 

তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই অস্ত্র ডিউটিতে কার্যকর নয়; বরং বিপদের সময় তা হয়ে ওঠে দায়। এক কনস্টেবল বলেন, “জীবন বাঁচাতে গিয়ে যদি অস্ত্র ব্যবহার করি, পরে মামলা হয়, চাকরি যায়। আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করলে হয় শাস্তি, না করলে হয় মৃত্যু।” ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতি এখনো তাদের মনে গেঁথে আছে। সেদিন দায়িত্ববোধের কারণে কেউ অস্ত্র ফেলে দিতে পারেননি, ফলস্বরূপ বহু সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তাদের মানসিকতায় গভীর দাগ রেখে গেছে।

 

তাদের মতে, ঢাল ও লাঠি হাতে থাকলে অন্তত আত্মরক্ষার সুযোগ থাকে, ভারী অস্ত্রের মতো ওজন বা দায়বদ্ধতা থাকে না। “রাইফেল কাঁধে নিলে দৌড়ানো যায় না, ফেলে পালানো যায় না। ফেলে দিলে চাকরি থাকে না, আর হাতে রাখলে প্রাণ থাকে না” এই কথাগুলো এখন অনেক পুলিশ সদস্যের বাস্তব অভিজ্ঞতা।

 

এ কারণে অনেক কনস্টেবল এখন ধীরে ধীরে একত্র হচ্ছেন, কিন্তু প্রকাশ্যে নয় নীরবে, দায়িত্ববোধ বজায় রেখে। তারা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে চান না, বরং রাষ্ট্রের কাছেই চাইছেন সুরক্ষা ও স্বীকৃতি। তাদের দাবি স্পষ্ট যেসব পুলিশ সদস্য আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আইনানুগভাবে অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন, অথচ পরে তদন্ত ছাড়াই মামলা ও শাস্তির মুখে পড়েছেন, তাদের মুক্তি দিতে হবে। আর ভবিষ্যতের জন্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই অস্ত্র ব্যবহারের স্পষ্ট ও ন্যায়সংগত নীতি নির্ধারণ করতে হবে।

 

তারা বলছেন, “আমরা চাকরি করি জীবিকার জন্য, কিন্তু সেই জীবিকার বিনিময়ে আমাদের প্রাণ যাবে কেন? আমরা যদি নিজেদেরও রক্ষা করতে না পারি, তাহলে জনগণকে কীভাবে রক্ষা করব?”

 

অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকারের নেতৃত্ব মানতে চায় না পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

 

চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে গেছে জঙ্গীদের পাহারা দিতে চায় না”এই কথাগুলো এখন গুঞ্জরিত। এমন বক্তব্য স্রেফ বিক্ষিপ্ত গুজব নয়; রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত সংস্থার ওপর রুদ্ধশ্বাস আস্থা ভাঙলে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা আরও কঠিন হবে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় ভীতি। দেশের নিরাপত্তা কাঠামোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশও চায় অনুকূল পরিবেশ একটি পরিষ্কার, স্বচ্ছ ও ন্যায্য সিদ্ধান্ত ব্যবস্থা, যাতে তারা দায়িত্ব পালন করে ভয় ছাড়া।

 

পুলিশ বাহিনী শুধু আইন প্রয়োগকারী নয়, তারা রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড। কিন্তু যখন সেই মেরুদণ্ড অবিশ্বাস, ভয়ের ভার এবং মামলার আতঙ্কে ভেঙে পড়ে, তখন গোটা রাষ্ট্রকাঠামোই দুর্বল হয়ে যায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই কনস্টেবলদের নীরব আবেদন তাই আসলে একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করছে—রাষ্ট্র কি তার রক্ষাকারীদের রক্ষা করতে পারছে?

 

আজকের পুলিশ সদস্যরা রাইফেলের চেয়ে ঢাল-লাঠিকে নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে দেখতে চান। তারা কোনো সংঘাত চান না; তারা শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার চান। তাদের এই অবস্থান কেবল একটি পেশাগত দাবি নয় এটি মানবতার, মর্যাদার এবং আত্মরক্ষার ন্যায্য আর্তি।

 

এক তরুণ কনস্টেবল হয়তো সেই কথাটিই সবচেয়ে সহজভাবে বলেছেন

“আমরা যুদ্ধ করতে আসিনি, আমরা শান্তি রক্ষা করতে এসেছি। যদি সত্যের জন্যই মরতে হয়, তবে সেটাই হবে পুলিশের আসল গর্ব।”

সব খবর

আরও পড়ুন

যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

বুদ্ধিজীবী দিবসে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতি যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

মতামত ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস : বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

রঙতুলির বিদ্রোহ শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মানবাধিকার সংকটের নতুন আতঙ্ক নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস

ব্যঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস

ডিসেম্বর আসিলেই যাহাদের চুলকানি বাড়ে

ব্যঙ্গ কলাম ডিসেম্বর আসিলেই যাহাদের চুলকানি বাড়ে

তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?

মতামত তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?