সর্বশেষ

ব্যঙ্গ কলাম

নারীপ্রেমে উন্মত্ত জামায়াত: তিন শূন্যের মহাপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৮
নারীপ্রেমে উন্মত্ত জামায়াত: তিন শূন্যের মহাপরিকল্পনা

যে দেশে সূর্য ওঠে নারীর কপালে, সে দেশে আজ এক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটিয়াছে, যিনি নারীর দুঃখে কাতর, নারীর ক্লান্তিতে বিমর্ষ, নারীর ধূলায় আক্রান্ত মুখে অশ্রুপাত করেন। তিনি আর কেউ নন, জামায়াতে ইসলামের মহামান্য আমির। তিনি ঘোষণা দিয়াছেন, নারীর কষ্ট তিনি সহ্য করিতে পারেন না। অতএব, ক্ষমতায় গেলে নারীরা আর আট ঘণ্টা কাজ করিবেন না, করিবেন মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। এবং ধাপে ধাপে সেই কর্মঘণ্টা শূন্যে নামাইয়া আনিবেন। কী অপূর্ব মানবিকতা!

 

নারীর প্রতি এই অতল প্রেমে তিনি আরও এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন। পথেঘাটে ধূলাবালি হইতে রক্ষা করিবার জন্য নারীদের মাস্কের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক হিজাব ও নেকাব পরিধান করিতে হইবে। স্বাস্থ্যসুরক্ষায় এমন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ পূর্বে কেহ চিন্তাও করেন নাই। যাহারা বলেন, জামায়াত নারীবিদ্বেষী তাহারা নিশ্চয়ই এখন লজ্জায় মুখ ঢাকিয়া আছেন।

 

তবে এই প্রেমের গভীরতা এখানেই শেষ নহে। আমির মহাশয় মনে মনে আঁটিতেছেন, কর্মস্থলে জিরো নারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জিরো নারী, পথে ঘাটে জিরো নারী—এই ‘থ্রি জিরো’ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করিয়া তিনি ড. ইউনূসের জীবনাকাঙ্ক্ষা পূরণ করিবেন। নারীরা যেন উৎফুল্ল, কারণ তাহারা জানেন, জামায়াতের হাতে তাহাদের ভবিষ্যৎ কতটা নিরাপদ! কর্মহীন, শিক্ষাহীন, ঘরবন্দি জীবন—এত শান্তি আর কোথায়?

 

তবে নারীদের আতঙ্কিত হইবার কারণ নাই। জামায়াতের নারীপ্রেম এতই গভীর যে, শিশুকাল হইতেই তাহারা নারীদের দায়িত্ব লইতে প্রস্তুত। জন্মলগ্নে হইতেই নারীর জীবন জামায়াতের তত্ত্বাবধানে চলিবে। কী অপূর্ব পরিকল্পনা! নারীর স্বাধীনতা, স্বপ্ন, স্বাবলম্বিতা—সবকিছু জামায়াতের স্নেহছায়ায় বিলীন হইবে। তাহারা বলিবেন, “তোমরা ঘরে থাকো, আমরা তোমাদের হয়ে ভাবিব।”

 

দেশের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা নারী। তাহারা কী ভাবিতেছেন? নিশ্চয়ই ভাবিতেছেন, “আমরা এতদিন ভুল করিয়াছিলাম—শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি, ব্যবসা—সবই বৃথা। আমাদের উচিত ছিল ঘরে বসিয়া জামায়াতের নির্দেশনার অপেক্ষা করা।” নারীরা নিশ্চয়ই এখন জামায়াতের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তাহারা বুঝিয়াছেন, স্বাধীনতা মানে জামায়াতের ছায়ায় বসবাস।

 

তবে প্রশ্ন জাগে, এই ‘শূন্য নারী’ সমাজে পুরুষগণ কী করিবেন? তাহারা নিশ্চয়ই নারীর অনুপস্থিতিতে আরও বেশি কাজ করিবেন, আরও বেশি আয় করিবেন এবং ঘরে ফিরিয়া বলিবেন, “আজও তোমার জন্য হিজাব কিনিয়া আনিলাম।” নারীর মুখে হাসি ফুটাইবার জন্য জামায়াতের এই প্রচেষ্টা সত্যই প্রশংসনীয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, আদালত, সংবাদমাধ্যম—সবখানে নারীর অনুপস্থিতি নিশ্চিত করিলে সমাজে নেমে আসিবে এক অপূর্ব নীরবতা। নারীর কণ্ঠস্বর, চিন্তা, প্রতিবাদ—সবই হইবে অতীত। তাহারা থাকিবেন ঘরে, পর্দার আড়ালে, জামায়াতের আদর্শে গড়া এক নিঃশব্দ সমাজে।

 

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হইলে বাংলাদেশ হইবে বিশ্বের প্রথম ‘নারীশূন্য গণতন্ত্র’। জাতিসংঘ নিশ্চয়ই এই মডেলকে ‘স্মার্ট শূন্যতা’ নামে স্বীকৃতি দিবে। নারীর অধিকার রক্ষায় এমন সাহসী পদক্ষেপ কেবল জামায়াতই নিতে পারে।

 

শেষে বলিব, জামায়াতের এই নারীপ্রেম সত্যিই অতুলনীয়। তাহারা নারীর জন্য ভাবেন, নারীর জন্য কাঁদেন, নারীর জন্য সমাজকে শূন্য করিতে চান। এমন প্রেমে দেশবাসী নিশ্চয়ই অভিভূত। নারীরা নিশ্চয়ই ভাবিতেছেন, “আমরা আর কিছু চাই না, শুধু জামায়াতের শূন্যতায় বিলীন হইতে চাই।”

 

জয় হোক নারীপ্রেমের, জয় হোক শূন্য কর্মঘণ্টার, জয় হোক হিজাব-নেকাবের, জয় হোক জামায়াতের ‘থ্রি জিরো’ সমাজের। কারণ, স্বাধীনতা মানে শূন্যতা, আর শূন্যতা মানেই জামায়াতের প্রেম।

 

লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল - শূন্যতার গভীরে নিমজ্জিত হতে হতে অন্ধকারের গাহি গান

সব খবর

আরও পড়ুন

রাজনীতির সার্কাসে সোনার বাংলায় নামিতেছে শীত, আতঙ্কের জনপদ

ব্যঙ্গ কলাম রাজনীতির সার্কাসে সোনার বাংলায় নামিতেছে শীত, আতঙ্কের জনপদ

রয়টার্সের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ, বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে হুমকি—বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীনতা নতুন সংকটে

মতামত রয়টার্সের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ, বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে হুমকি—বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীনতা নতুন সংকটে

দূষিত পানি খেয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা

চট্টগ্রাম কারাগারে ভয়ংকর মানবিক সংকট দূষিত পানি খেয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা

শেখ হাসিনার নীরব প্রত্যাবর্তন

রহমান বাঙ্গালি’র মতামত কলাম শেখ হাসিনার নীরব প্রত্যাবর্তন

নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় হচ্ছে না নির্বাচন

মতামত নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় হচ্ছে না নির্বাচন

শান্তির দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি কেন?

মতামত শান্তির দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি কেন?

পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলে নিরাপত্তা ঝুঁকি, সতর্ক নজরদারি জরুরি

মতামত পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলে নিরাপত্তা ঝুঁকি, সতর্ক নজরদারি জরুরি

আর্মচেয়ার প্রবৃত্তির আর্মচেয়ার নেশন: ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনোকালে?

মতামত আর্মচেয়ার প্রবৃত্তির আর্মচেয়ার নেশন: ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনোকালে?