গত বছরের জুলাই-আগস্টে কোটা বিরোধী আন্দোলনে প্রথমদিকে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা না থাকলেও শেষ দিকে ছাত্রদের সঙ্গে এসে যোগ দেয় সাধারণ শ্রমিকরাও। সে সময় হয়তো তারা ভেবেছিল শ্রমিকদের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে হয়ে আসা বৈষম্য বুঝি এবার শেষ হবে। নতুন এক বাংলাদেশ পাবে তারা।
কিন্তু তাদের সেই ভুল ভাঙতে খুব বেশি সময় লাগেনি। গত বছর ৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর থেকে একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষ এবং আন্দোলন আমরা দেখেছি।
আজ উত্তরবঙ্গের জেলা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক অন্তোষের জেরে শ্রমিক-পুলিশ-সেনাবাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে হাবিব ইসলাম নামের এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হোন।
খবরে প্রকাশ ইপিজেড এলকায় অবস্থিত এভারগ্রিন নামে একটি কোম্পানিতে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে দুইদিন ধরে আন্দোলন করছেন ইপিজেডের শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার রাতে হঠাৎ করে কোম্পানি বন্ধের নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ শ্রমিক আজ মঙ্গলবার সকালে ইপিজেডের মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
শ্রমিক আন্দোলন দমাতে সরকারী বাহিনীগুলো মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে যা খুবই উদ্বেগজনক এবং মানবতাবিরোধী কাজ। সেখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রশাসন তড়িৎ ব্যবস্থা নিলে এমন প্রাণহানি এড়ানো যেত। কিন্তু গত এক বছরে নানা ঘটনায় দেশে যে প্রশাসন বা আইন-শৃংঙ্খলা বলে কিছু রয়েছে এটা বোঝা দায় হয়ে গেছে সবার জন্য।
শ্রমিকদের জন্য বা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এদিকে বিবিসি বাংলা আজই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে শ্রমিকদের সংকট, আর্থিক দূরাবস্থা, কারখানা বন্ধ হওয়া এবং শ্রমিকদের বেকার হয়ে যাওয়ার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ, শঙ্কা আর শঙ্কা নেই, বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটি শিল্পাঞ্চল পুলিশের বরাত দিয়ে বলছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ২৩৯টি শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৮৯৩ জন শ্রমিক। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ যেমন বন্ধ হয়েছে তেমনিভাবে দেশীয় বিনিয়োগও প্রায় স্থবির হয়ে রয়েছে।
একই কথা বলেছে এ সরকারেরই আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডিও ইতিপূর্বে জানিয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে নতুন কর্মসংস্থান তো তৈরি হচ্ছেই না উপরন্তু গত এক বছরে বিদ্যমান শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে নতুন বেকার যুক্ত হয়েছে দেড় লাখ।
যে শ্রমিকদের ঘাম ঝড়ানো শ্রমে গড়ে উঠেছে আমাদের অর্থনীতির বুনিয়াদ তাদের জীবন এভাবে বুলেটবিদ্ধ হয়ে রক্ত ঝড়ে শেষ হয়ে যাবে তা মোটেই প্রত্যাশিত না।