বাংলাদেশের ইতিহাসে আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য ও পীর–আউলিয়ার মাজার শুধু ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, বরং সামাজিক মিলনস্থলও বটে। শত শত বছর ধরে এগুলো সাম্য, সহনশীলতা ও মানবতার বার্তা ছড়িয়েছে। অথচ সম্প্রতি গোয়ালন্দে যে তাণ্ডব ঘটেছে, তা আমাদের ঐতিহ্য ধ্বংসের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও থানা জামায়াতের নেতা মৌলানা জালাল ১৫–২০ দিন আগে ‘ঈমান ও আকিদা রক্ষা কমিটি’ নামের সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের ছত্রছায়ায় পৌর বিএনপি সভাপতি আবুল কাশেম ও থানা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক আয়ুব আলী খানের নেতৃত্বে গতকাল একটি মাজার ভেঙে ফেলা হয়। শুধু তাই নয়, কবর থেকে লাশ তুলে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় তা পুড়িয়ে ফেলার নৃশংস ঘটনাও ঘটে।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় এবং ২০০১ সালে বিএনপি–জামায়াত সরকারের আমলে মাজার ও দরগাহে হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাও ছিল উগ্রবাদী রাজনীতির চরম উদাহরণ। সম্প্রতি ইউনূস গোষ্ঠী ক্ষমতা দখলের পর আবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে পীর–আউলিয়ার মাজার ধ্বংস ও অপবিত্র করার ঘটনা ঘটছে।
ধর্মের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এসব তাণ্ডব চালানো হলেও এর মূল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। ‘তৌহিদি জনতা’র নামে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করা হচ্ছে, কিন্তু এর অন্তরালে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও জঙ্গিবাদী পুনঃসংগঠনের চক্রান্ত।
গোয়ালন্দের এই ঘটনা একটি জাতীয় সংকেত। জামায়াত–বিএনপি সুযোগ পেলেই দেশকে ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়। তাই আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য রক্ষায় ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অটুট রাখতে রাষ্ট্র ও জনগণকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।