সর্বশেষ

শাহবাগে শিক্ষকদের রক্তঝরা প্রতিবাদ, লাঠির আঘাতে আহত শতাধিক শিক্ষক

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩:১৯
শাহবাগে শিক্ষকদের রক্তঝরা প্রতিবাদ, লাঠির আঘাতে আহত শতাধিক শিক্ষক

রাজধানীর শাহবাগ আবারও সাক্ষী হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের প্রতিবাদের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়ের। শিক্ষা আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ মিছিল রক্তাক্ত হলো পুলিশের লাঠিচার্জে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন যাদের রক্তে ভিজে উঠেছে শাহবাগের পিচঢালা পথ।

 

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেল পৌঁনে ৫টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। শিক্ষক নেতাদের দাবি, প্রায় ১১০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জে। আহতদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।


ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, “আহত শিক্ষকদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইট, লাঠি ও বেতের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন, কয়েকজন এখনো ভর্তি আছেন।”

 

ভর্তি হওয়া আহতদের মধ্যে ঝিনাইদহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪০) বর্তমানে ১০১ নম্বর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাঁর মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন কাঠামোর বৈষম্য, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা সমতার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। সরকারের কাছে বহুবার স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কার্যকর পদক্ষেপ না পাওয়ায় তাঁরা শনিবার শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি হঠাৎই রূপ নেয় সংঘর্ষে, যখন পুলিশ মিছিল সরাতে লাঠিচার্জ শুরু করে।

 

শিক্ষকদের ক্ষোভ ও হতাশা

 

আহত এক শিক্ষক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমরা বইয়ের মানুষ, আমাদের হাতে লাঠি নেই। অথচ ন্যায্য দাবি জানাতে এসেই লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হতে হলো!”

 

আরেকজন শিক্ষক যোগ করেন, “শিক্ষককে মারলে জাতির ভবিষ্যৎকে অপমান করা হয়। আমরা শিক্ষক, অপরাধী নই।”

 

শিক্ষক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এই ঘটনার পর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের প্রতি সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ না করে দমননীতির আশ্রয় নেওয়া রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত।

 

শিক্ষক মানে আলোকিত মানুষ, সমাজের দিকনির্দেশক। সেই শিক্ষক যদি রাস্তায় রক্তাক্ত হন, তা কেবল একটি গোষ্ঠীর ক্ষতি নয়—একটি জাতির আত্মসম্মানের আঘাত।
শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি শুনতে হবে, সম্মান দিতে হবে। কারণ লাঠি দিয়ে প্রতিবাদ দমন করা যায়, কিন্তু বঞ্চিতের কণ্ঠ চিরদিন স্তব্ধ করা যায় না।

সব খবর

আরও পড়ুন

যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

বুদ্ধিজীবী দিবসে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতি যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

মতামত ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস : বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

রঙতুলির বিদ্রোহ শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মানবাধিকার সংকটের নতুন আতঙ্ক নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস

ব্যঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস

ডিসেম্বর আসিলেই যাহাদের চুলকানি বাড়ে

ব্যঙ্গ কলাম ডিসেম্বর আসিলেই যাহাদের চুলকানি বাড়ে

তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?

মতামত তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?