সর্বশেষ

ওষুধের লাগামহীন দামে বিপাকে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:০৪
ওষুধের লাগামহীন দামে বিপাকে সাধারণ মানুষ
ওষুধের দাম

জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। গত দেড় বছরে কোনো কোনো ওষুধের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। কার্যকর তদারকির অভাবে ওষুধ কোম্পানি ও ফার্মেসি পর্যায়ে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। ক্রেতারা বলছেন, খাবারের দাম বাড়লে কাটছাঁট করা যায়, কিন্তু ওষুধের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়—ডোজ সম্পূর্ণ না করলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায়।

 

হাই কোর্ট সম্প্রতি এক রায়ে বলেছেন, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য সরকার নির্ধারণ করবে এবং তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। তবে বাস্তবে ওষুধের দাম বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। ওষুধ কোম্পানিগুলো ডলারের দাম বৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি জটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ খরচ, বিপণন ব্যয়সহ নানা অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি ডাক্তারদের উপঢৌকন, বিদেশভ্রমণ, নগদ অর্থ প্রদানসহ বিপুল ব্যয়ও ওষুধের দামে প্রভাব ফেলছে।

 

বর্তমানে দেশে ৩১০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ৪১৮০ জেনেরিকের ৩৫২৯০ ব্র্যান্ডের ওষুধ তৈরি করে। এর মধ্যে মাত্র ১১৭টি জেনেরিকের দাম সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বাকিগুলোর দাম কোম্পানির প্রস্তাব অনুযায়ী অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশের ২৪% মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এবং প্রতি বছর ৬২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের হিসাব বলছে, ২০২০ সালে দেশের মোট স্বাস্থ্যব্যয়ের ৬৯% ব্যক্তির পকেট থেকে খরচ হয়েছে, যার ৬৪.৬% ছিল ওষুধ কেনার জন্য।

 

ঢাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে দেখা গেছে, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, প্যারাসিটামল, ব্রোমাজিপাম, লোসারটান, ইসমিপ্রাজলসহ প্রায় সব ওষুধের দাম ২০-১১০% পর্যন্ত বেড়েছে। গেঁটে বাতের ওষুধ ‘অ্যানাফ্লেক্স ম্যাক্স-৫০০’ ১০ টাকা থেকে বেড়ে ২১ টাকা, দাঁতের ব্যথার ওষুধ ‘মারভ্যান’ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, ফ্যামোট্যাক ২৫ থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে।

 

একই রোগের একই ওষুধের দাম কোম্পানিভেদে ভিন্ন। যেমন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সার্জেল ৭ টাকা, সেকলো ৬ টাকা, জি-ওমিপ্রাজল ৩.৫ টাকা, প্রোগাট মাপস ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

ওষুধ কোম্পানিগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ডাক্তারদের প্রভাবিত করার কৌশল, এবং মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের পেছনে বিপুল ব্যয়—সব মিলিয়ে ওষুধের বাজারে নৈরাজ্য চলছে। ড. আসিফ নজরুল প্রশ্ন তুলেছেন, “ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল?”—এমন প্রশ্ন এখন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

ওষুধ শিল্প সমিতি বলছে, ডলারের দাম ৮০ থেকে ১২২ টাকা হওয়ায় কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু ২০ বছরেও এমআরপি মূল্য নির্ধারণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ওষুধের দাম বাড়ছে, আর ফতুর হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সব খবর