ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে ১৬টি নাগরিক সংগঠন। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানায় এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর নৃশংস সশস্ত্র হামলা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি সিঙ্গাপুরে মৃত্যুবরণ করেন। এই হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি “অশনিসংকেত” হিসেবে উল্লেখ করে সংগঠনগুলো দ্রুত, স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
বিবৃতি অনুযায়ী, হাদির মৃত্যুর পরপরই বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দেশজুড়ে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। এতে বলা হয়, এক বছর পার হলেও দেশি-বিদেশি শক্তির হাত থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। “বিভাজন ও অনৈক্যের রাজনীতি এবং সহিংসতা জুলাই প্রজন্মসহ সব নাগরিককে আরও অনিরাপদ করে তুলেছে,” উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

১৬ সংগঠন অভিযোগ করে, হাদি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়, ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন, নালন্দা বিদ্যালয় এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার সময় সংবাদকর্মীরা ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন এবং প্রাণ বাঁচাতে ছাদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। উদ্ধারকাজে উপস্থিত নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকেও হেনস্তার শিকার হতে হয়; নারী সাংবাদিকদের ওপরও হামলার অভিযোগ তোলা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা ও পরে লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা নজিরবিহীন বর্বরতার উদাহরণ। এ ছাড়া বান্দরবান, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু প্রভাবশালী ইনফ্লুয়েন্সার সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করে সংগঠনগুলো। তাদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে এসব ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান কোনো প্রতিক্রিয়াও ছিল না।
এ প্রেক্ষাপটে সংগঠনগুলো পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে হাদি হত্যাকাণ্ডসহ সব সহিংস ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার, নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ, অন্যায় গ্রেপ্তার বন্ধ এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অবিলম্বে পদত্যাগ। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি উসকানিদাতাদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে শেষ পর্যন্ত বলা হয়, প্রতিশোধ নয় ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পথেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে হবে।