আগামী ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর নিজের পদ থেকে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৃহস্পতিবার তিনি এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকলাপে তিনি অপমানিতবোধ করছেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। এর বাইরে পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। দেশের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে চলে গেলে সাহাবুদ্দিনের অবস্থান গুরুত্ব পায়।
সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সাহাবুদ্দিনই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন। রয়টার্স বলছে, বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে তাদেরকে এ সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “আমি বিদায় নিতে আগ্রহী। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে বলেই আমি এ অবস্থানে আছি।” রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, প্রায় সাত মাস হলো প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে কোনো ধরনের সাক্ষাৎ করেননি; তার প্রেস ডিপার্টমেন্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ফেলার কথাও বলেন তিনি। “সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাই কমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। এগুলো হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। মানুষজন ভাবতে পারে, রাষ্ট্রপতিকে হয়ত সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি।” সাহাবুদ্দিনের ভাষ্য, তিনি ছবি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রয়টার্স লিখেছে, রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের বিষয়ে তারা ইউনূসের প্রেস অফিসের কাছে বক্তব্য জানতে চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পায়নি।
মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি, যিনি চুপ্পু নামেই বেশি পরিচিত। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন। পরে সামলেছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি, মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে সে সময় ক্ষমতাদখলকারীরা। সাহাবুদ্দিনকেও তখন কারাবরণ করতে হয়। পেশায় আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তে যে কমিশন হয়েছিল, সাহাবুদ্দিন ছিলেন তার প্রধান। জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এই মহাসচিব বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।