সর্বশেষ

চট্টগ্রামে মার্কিন সামরিক বিমান ও সেনা উপস্থিতি: যৌথ মহড়া নাকি জল্পনায় সত্যতা?

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২০
চট্টগ্রামে মার্কিন সামরিক বিমান ও সেনা উপস্থিতি: যৌথ মহড়া নাকি জল্পনায় সত্যতা?
চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সদস্যরা

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কয়েকটি সামরিক বিমান অবতরণ এবং মার্কিন সেনা সদস্যদের উপস্থিতি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, অন্তত ১২০ জন মার্কিন সেনা চট্টগ্রামের অভিজাত হোটেল রেডিসন ব্লুতে অবস্থান করছেন, অথচ নাকি তাদের নাম গেস্ট রেজিস্টারে নেই। এই নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা—“দেশ কি আমেরিকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য?” এমন অভিযোগও দেখা গেছে।

 

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ারফোর্সের যৌথ উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী মহড়া ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫-৩’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। এই মহড়া আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। মহড়ায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান, একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রায় ১৫০ সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৯২ জন সদস্য।

 

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে যৌথ মহড়ার খবরে দেওয়া ছবি

 

আইএসপিআর জানিয়েছে, মহড়ায় উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ, কমব্যাট ট্র্যাকিং, সারভাইভাল এক্সারসাইজ এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সঙ্গে একাধিকবার যৌথ মহড়া হয়েছে।

 

অন্যদিকে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, প্যাসিফিক এঞ্জেল মহড়া মূলত মানবিক সহায়তা, দুর্যোগ মোকাবিলা, চিকিৎসা প্রস্তুতি, প্রকৌশল সহায়তা এবং বিমান নিরাপত্তা জোরদারের উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন।

 

তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো নানা দাবি-অভিযোগ থামেনি। একাধিক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, মার্কিন সেনারা রেডিসন ব্লু হোটেলের ৮৫টি কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন, কিন্তু রেজিস্ট্রারে নাম নেই। হোটেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত অতিথিরা নিয়ম মেনেই পাসপোর্ট ও ভিসার কপি দিয়ে অবস্থান করছেন।

 

ইউএস এয়ারফোর্সের এক সদস্য মহড়া নিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন

 

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এর আগেও বাংলাদেশে মার্কিন সেনার উপস্থিতি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামে যৌথ মহড়ার সময় একই ধরনের প্রশ্ন উঠেছিল। এছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনা রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন, আমেরিকা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঘাঁটি স্থাপন করতে চায়।

 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আবারও মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ হয়ে মানবিক করিডোর তৈরির প্রসঙ্গ ওঠায় বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। সমালোচকরা মনে করছেন, এসব মহড়া কেবল প্রশিক্ষণ নয়, বরং এর মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির পথ প্রশস্ত করা হতে পারে।

 

তবে সরকার ও সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে, যৌথ মহড়া নতুন কিছু নয়। এটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি অংশ, এর সঙ্গে সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগের কোনো সম্পর্ক নেই।

সব খবর