সরকারি নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থে একের পর এক বিদেশ সফরে যাচ্ছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিদেশ সফরে কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা জারি থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, ইআরডি, আইএমইডি ও পরিকল্পনা কমিশনের অন্তত ৩৫ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের অনুমোদন মিলেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সর্বশেষ এক সরকারি আদেশে (জিও) দেখা যায়, মোবাইল টয়লেট সরবরাহের বিপরীতে তিন কর্মকর্তা চীনে ভ্রমণের অনুমতি পেয়েছেন। ব্যয় বহন করবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শ্যাংডং কিউয়ানবাই ইন্টেলিজেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং। একইভাবে, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের যন্ত্রপাতি কেনার কাজে যুক্ত কর্মকর্তারা জার্মানি ভ্রমণ করছেন টেক-স্ট্রেইট এনার্জি সার্ভিসেসের অর্থে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাম্প্রতিক এক জিওতে ১৫ কর্মকর্তাকে চীনে সফরের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের নকশা ও প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার কথা বলা হলেও এর সব ব্যয় বহন করছে চীনা কোম্পানি ডংফেং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (ডিইসি)।
সরকারি নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, ঠিকাদার বা সরবরাহকারীর অর্থায়নে বিদেশ ভ্রমণ অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যন্ত্রপাতি কেনা, ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপটেন্স টেস্ট কিংবা প্রশিক্ষণের নামে নিয়মিত এ ধরনের সফর হচ্ছে। এতে সরবরাহকারীদের প্রতি কর্মকর্তাদের একধরনের আনুগত্য তৈরি হয় এবং নিম্নমানের পণ্য বা সেবার বিষয়ে নীরব থাকার প্রবণতা বাড়ে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সরবরাহকারীদের অর্থে বিদেশ ভ্রমণ শুধু অনৈতিক নয়, এটি সরকারি নির্দেশনারও লঙ্ঘন। আসলে কোম্পানিগুলো কখনো নিজের পকেট থেকে খরচ করে না—এ খরচ সরাসরি প্রকল্প ব্যয়ে যোগ হয়। ফলে জনগণের টাকাই পরোক্ষভাবে খরচ হয়।”
অতীতেও এ ধরনের সফর নানা সমালোচনা কুড়িয়েছে। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কৃচ্ছ্রসাধন ও ব্যয়সংকোচনের নীতি অনুসরণের ঘোষণা দেওয়া হলেও সরকারি কর্মকর্তাদের ‘প্রশিক্ষণ’ বা ‘পরিদর্শন’-এর নামে বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব সফরকে ‘প্লেজার ট্রিপ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, “বিদেশ সফরে সরকারি নির্দেশনা মানা সবার দায়িত্ব। এ নিয়ম অমান্য করা চাকরিবিধির পরিপন্থী।”
ফলে প্রশ্ন উঠছে—সরকারি নির্দেশনা জারি থাকলেও কীভাবে ঠিকাদার ও সরবরাহকারীর অর্থে একের পর এক সফরের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি কেবল অনিয়ম নয়, রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্যও বড় হুমকি।