সর্বশেষ

প্রয়াণ দিবসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা আর সংগীতে স্মরণ

প্রকাশিত: ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১৬:০৬
প্রয়াণ দিবসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা আর সংগীতে স্মরণ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে। বুধবার ভোর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ভিড় জমে কবির পরিবারের সদস্য, শুভানুধ্যায়ী, সংগঠন ও সাধারণ মানুষের। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিকে স্মরণ করা হয়।

 

নজরুলের সমাধিতে সকালে কবির পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় নজরুলের নাতনী খিলখিল কাজী বলেন, “কেবল দিবসকেন্দ্রিক স্মরণই যথেষ্ট নয়। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে নজরুল কতটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছেন।” তিনি নজরুলের রচনাবলী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান এবং বাংলা একাডেমি থেকে অনুবাদে ঘাটতির কথাও উল্লেখ করেন।

 

এদিন বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। সমাধি প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিল্পীরা পরিবেশন করেন নজরুলের গান—‘বাগিচায় বুলবুলি’ ও ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’।

 

 

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, নজরুল রচনাবলী প্রকাশ করা হলেও অনুবাদ ও বিশ্বমুখী প্রচারণায় নজরুল ইনস্টিটিউটের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। “বাংলা একাডেমি কাজ করছে, তবে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নজরুল ইনস্টিটিউটের কাজ করার সুযোগ ও সক্ষমতা বেশি,” তিনি মন্তব্য করেন।

 

শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নজরুলের রচনা এ দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস। “নজরুলের চেতনা ধারণ করেই বিএনপি কাজ করছে,” দাবি করেন তিনি।

 

ভাষাবিদ সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, নজরুল অমরত্বের জন্য লেখেননি; তিনি যুগের প্রয়োজন মেটাতে কলম ধরেছিলেন। কিন্তু তার অগ্নিগর্ভ রচনা আজও মানুষকে আন্দোলিত করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “নজরুল শুধু কবি নন, সাংবাদিক, সৈনিক, সুরকার ও বিপ্লবী। তার বৈচিত্র্যময় জীবন ও সংগ্রাম আমাদের শিক্ষা ও সামাজিক জীবনে চর্চা করতে হবে।”

 

বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন নজরুল। শৈশবে পিতৃহারা হয়ে মসজিদে মুয়াজ্জিন থেকে লেটো দলে গান রচনা, পরে সেনাবাহিনীর সৈনিক—এভাবেই জীবনের নানা বাঁকে গড়ে ওঠে তার সংগ্রামী চরিত্র।

 

১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’। সেই বজ্রনির্ঘোষ কবিতায় ব্রিটিশ রাজ কেঁপে ওঠে। ব্রিটিশবিরোধী লেখালেখির জন্য তাকে বহুবার কারারুদ্ধ হতে হয়। অগ্নিবীণা, প্রলয়োল্লাস, বিষের বাঁশি, ব্যথার দানসহ বহু গ্রন্থ তার প্রতিভার স্বাক্ষর।

 

সংগীতেও নজরুল ছিলেন সমান শক্তিমান। শ্যামা সংগীত ও ইসলামী গজল—উভয় ধারাতেই চার হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন তিনি। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তার গান ও কবিতা বাঙালির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থেকেছে।

 

১৯৪২ সালে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান কবি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয়।

 

আজও নজরুলের চেতনা সমান প্রাসঙ্গিক। জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা প্রজন্মের অংশগ্রহণে আবারও প্রতিধ্বনিত হলো সেই চেতনা—দ্রোহ, প্রেম ও মানবতার।

সব খবর