শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের বাজারে ইলিশের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়েছে ইলিশ রপ্তানি। প্রথম চালানে ৩৭ দশমিক ৪৬ টন ইলিশ মাছ সাতটি ট্রাকে করে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন রেজা।
রপ্তানিকৃত প্রতি কেজি ইলিশের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক দেড় হাজার টাকা। তবে এই মূল্য নিয়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কারণ দেশের বাজারে একই ওজনের ইলিশের দাম অনেক বেশি। ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশই বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই ওজনের ইলিশই ভারত পাচ্ছে কম দামে ।
ক্রেতাদের অভিযোগ, দেশের বাজারে ইলিশের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। বাজারে গিয়ে অনেকেই ইলিশ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা ও খুলনার রূপসা বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম এবং দাম বেশি—এমন অভিযোগ উঠেছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কলকাতার পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই ইলিশ আমদানি করেছে। রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশের ৩৭টি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠান ৩০ টন করে, ৯টি প্রতিষ্ঠান ৪০ টন করে এবং দুটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন করে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে। মোট রপ্তানির পরিমাণ হবে ১ হাজার ২০০ টন।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন কর্মকর্তা সজীব সাহা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ইলিশ রপ্তানির কার্যক্রম ৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি চালান প্যাকেটজাত, বরফসহ এবং স্বাস্থ্যসনদ নিশ্চিত করে রপ্তানি করা হচ্ছে।”
তবে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—দেশের চাহিদা পূরণের আগেই বিদেশে ইলিশ রপ্তানি কতটা যৌক্তিক? অনেকেই মনে করছেন, পূজার সময় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত রাখতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এতে দেশীয় ভোক্তারা উপেক্ষিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এ রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হবে এবং ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশি মাছের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
তবে দেশের বাজারে ইলিশের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে আনা না গেলে, এই রপ্তানিকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ আরও বাড়বে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।