রাজধানীর বাজারগুলোতে চাল-ডালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে মাছ, সবজি, মুরগি ও ডিমের দাম। প্রতি সপ্তাহেই যেন হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০-৫০ টাকা। অধিকাংশ সবজির দাম কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় হাতেগোনা কয়েকটি সবজির দাম ১০ টাকা পর্যন্ত কমলেও বেড়েছে অধিকাংশ সবজির দাম।
এছাড়া ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা ও ডিম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় মাছ ও সবজির দাম বেড়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।
বিগত সরকারের আমলেও সিন্ডিকেট এবং অব্যবস্থাপনার কারণে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে রাস্তায় নেমেছিল সাধারণ জনগণ। আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সে সময়ে প্রথম প্রথম বাজার ব্যবস্থাপনা কিছুটা ঠিক ছিল। কিন্তু এখন আর এসব দেখার কেউ নেই বলেই জানালেন ক্রেতারা। ক্রেতারা জানিয়েছেন, আবারও সেই একই কায়দায় চলছে রাজধানীর বাজারগুলো। নিত্যপণ্যের দামের সাথে ব্যবসায়ীদের চাঁদা দেওয়ার অঙ্কটাও যুক্ত হচ্ছে। ফলে বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্রেতারাও বেশ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।
গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রধান পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার এবং মিরপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে কারওয়ান বাজার রাজধানীর বড় পাইকারি বাজার হওয়ায় এ বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা কম রয়েছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মো. মনির নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘মাছ সরবরাহ কম। সেজন্য দাম চড়া। নদীতে মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে বলে শুনছি। সেটা মাছ না আসার কারণ হতে পারে।’ আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘মাছের বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ এটি নির্ভর করে সরবরাহের ওপর।’
অন্য এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘চাঁদা থেমে নেই। রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়, বাজারে চাঁদা দিতে হয়। এই টাকাটাতো আমাদের পুঁজি থেকেই দিতে হয়। কাজেই সবকিছু মিলিয়েই দাম একটু বাড়তি।’
কারওয়ান বাজারে মাছের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে মাছের দাম বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চিংড়ির। গত সপ্তাহে বড় সাইজের বাগদা প্রতি কেজি ৮৩০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা বিক্রি হয় ৯০০ টাকায়। এছাড়া গলদা চিংড়ি ৮৫০ ও ছোট চিংড়ি ৭০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ইলিশ মাছের দাম বেড়েছে ওজনভেদে ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৬০০ ও এক কেজির কিছুটা কম ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বড় রুই ৫০০ টাকা, মাঝারি ৪৬০ ও ছোট রুই বিক্রি হয় ৩৬০ টাকা কেজি দরে। কাতল মাছ ৩৬০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। গত সপ্তাহে বড় সাইজের কাতলের দাম ছিল ৩৮০ টাকা। ছোট কোরাল মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০, সিলভার কার্প ২৫০, পাবদা ৪০০, রূপচাঁদা ৮৫০ ও টেংরা ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, সোনালি ৩০০ ও দেশী মুরগি ৫৩০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। গত সপ্তাহে এ বাজারে ব্রয়লার মুরগি ছিল ১৭০ টাকা। কারওয়ান বাজার ছাড়া রামপুরা, হাতিরপুল, মিরপুর-১সহ বিভিন্ন বাজারে গতকাল ব্রয়লার বিক্রি হয় ১৯০-২০০ ও সোনালি ৩৩০ টাকায়। গত সপ্তাহে ডজনপ্রতি লাল ডিমের দাম ছিল ১২৫ ও সাদা ডিম ১২০ টাকা।
রাজধানীর মিরপুরের বেশ কিছু কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। বিক্রেতারা জানালেন, ভারত, চীন এবং পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে খুব একটা নেই। এগুলো সব দেশি পেঁয়াজ, পাবনার। এছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।