সর্বশেষ

বিজিএমইএ’র আশঙ্কা

নতুন শ্রম আইন শিল্পখাতে অস্থিতিশীলতা আনবে

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৩
নতুন শ্রম আইন শিল্পখাতে অস্থিতিশীলতা আনবে

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) আশঙ্কা করছে, সম্প্রতি অনুমোদিত ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ দেশের পোশাক খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং বিনিয়োগ পরিবেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) উত্তরা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান এ মন্তব্য করেন।

 

তিনি বলেন, “মাত্র ২০ জন শ্রমিক মিলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার সুযোগ দিলে কারখানাগুলোতে বাইরের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ বাড়বে। এতে শিল্পে দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা তৈরি হবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হবে এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিরুৎসাহিত হবেন।”

 

বর্তমান শ্রম আইনে কোনো প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য অন্তত ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু নতুন সংশোধনীতে এ সংখ্যা কমিয়ে ২০ করা হয়েছে। বিজিএমইএ বলছে, এটি ভারসাম্যহীন ও বাস্তবতা-বিবর্জিত সিদ্ধান্ত।

 

সংগঠনটি জানায়, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (টিসিসি) ও ওয়ার্কিং কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনার পর একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল যেখানে প্রথম ধাপে ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ন্যূনতম ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদ একতরফাভাবে সেটি পরিবর্তন করে ২০–৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করেছে।

 

আন্তর্জাতিক তুলনা টেনে বিজিএমইএ জানায়, ভারতে ১০ শতাংশ শ্রমিক বা ন্যূনতম ১০০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠন করা যায়, আর পাকিস্তানে এ হার ২০ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশে মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে ইউনিয়ন গঠন করার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ।

 

অধ্যাদেশে থাকা ‘ভবিষ্য তহবিল’ ও সর্বজনীন পেনশন ‘প্রগতি’—দুটি স্কিম একসঙ্গে চালুর প্রস্তাবকেও বিজিএমইএ দ্বৈত জটিলতা হিসেবে দেখছে। তাদের দাবি, এতে উদ্যোক্তাদের দুটি পৃথক আর্থিক ব্যবস্থাপনা সমান্তরালে চালাতে হবে, যা প্রশাসনিক জটিলতা, ব্যয় বৃদ্ধি এবং তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।

 

বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, “শ্রমিকের সংজ্ঞায় কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত করা প্রশাসনিক স্তর ও শ্রমিক স্তরের বিভাজন ভেঙে দেবে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশৃঙ্খলা ও পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেবে।”

 

সংগঠনটির অভিযোগ, টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটিতে সব পক্ষের অংশগ্রহণে গৃহীত অনেক সিদ্ধান্তই উপদেষ্টা পরিষদ আলোচনা ছাড়াই পরিবর্তন করেছে। এটি শিল্প, শ্রমিক ও সরকারের পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ককে দুর্বল করবে।

 

প্রতিযোগী দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে বিজিএমইএ জানায়, ভারত, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় শ্রম আইনে একক ও বিনিয়োগ-বান্ধব কাঠামো বিদ্যমান। বাংলাদেশে যদি দ্বৈত তহবিল ব্যবস্থা ও অবাস্তব ইউনিয়ন কাঠামো কার্যকর হয়, তবে বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস, রপ্তানি সংকোচন এবং শিল্পে অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে।

 

সংগঠনটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, শ্রম আইন এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে শ্রমিক ও শিল্প উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হয়। বিজিএমইএ মনে করে, টেকসই উন্নয়ন ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে বাস্তবতা-সম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ শ্রম আইন জরুরি।

 

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি, পরিচালক ও বর্তমান নির্বাহী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সব খবর

আরও পড়ুন

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলে উদীচীর তীব্র প্রতিবাদ

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলে উদীচীর তীব্র প্রতিবাদ

কে চালাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি?

জাকার্তা পোস্টের বিশেষ প্রতিবেদন কে চালাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি?

শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নতুন বাস্তবতা

শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের বিশেষ বিশ্লেষণ শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নতুন বাস্তবতা

২০৮ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র তিনটি: জনপ্রশাসন সংস্কার আটকে কোথায়?

সংস্কারের হাল-হকিকত ২০৮ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র তিনটি: জনপ্রশাসন সংস্কার আটকে কোথায়?

আজ জেলহত্যা দিবস

৩রা নভেম্বর আজ জেলহত্যা দিবস

বিশ্ববাজারে গমের দরপতন, দেশে উল্টো বাড়ছে আটার দাম

অতিরিক্ত দামে বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ বিশ্ববাজারে গমের দরপতন, দেশে উল্টো বাড়ছে আটার দাম

স্বাস্থ্য খাতে ৩৩ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র ৬টি

সংস্কারের হাল-হকিকত স্বাস্থ্য খাতে ৩৩ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র ৬টি

ডিসেম্বরে বাংলাদেশে খাদ্যসংকটে পড়বে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ, ঝুঁকিতে ১৬ লাখ শিশু

আইপিসি রিপোর্ট ডিসেম্বরে বাংলাদেশে খাদ্যসংকটে পড়বে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ, ঝুঁকিতে ১৬ লাখ শিশু