সর্বশেষ

লালনগীতির কিংবদন্তি কণ্ঠ ফরিদা পারভীন আর নেই

বিনোদন ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:৫৬
লালনগীতির কিংবদন্তি কণ্ঠ ফরিদা পারভীন আর নেই

লোকসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ও লালনগীতির কিংবদন্তি কণ্ঠ ফরিদা পারভীন আর নেই। শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মৃত্যুর খবরটি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। স্বামী ও চার সন্তান রেখে গেছেন এই গুণী শিল্পী।

 

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছিল তাঁকে। গত ২ সেপ্টেম্বর ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে ভর্তি করা হয় এবং আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত বুধবার তাঁকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। অবশেষে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন তিনি না–ফেরার দেশে।

 

১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়ায় জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন ছোটবেলা থেকেই গান শেখা শুরু করেন। ওস্তাদ কমল চক্রবর্তীর কাছে তাঁর সংগীতের হাতেখড়ি। এরপর নজরুলসংগীত ও আধুনিক গান দিয়ে পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হলেও পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন মূলত লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে।

১৯৭৩ সালে ওস্তাদ মোকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনগীতির তালিম নেন তিনি। সেই সময় থেকে জীবনের সিংহভাগ সময় কাটান লালনের গান গেয়ে ও প্রচার করে। তাঁর কণ্ঠে ‘সত্য বল সুপথে চল’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’সহ অসংখ্য গান মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

 

বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বদরবারেও ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর কণ্ঠে লালনের দর্শন। জাপান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশে তিনি লালনগীতি পরিবেশন করেছেন।

 

ফরিদা পারভীনের গানে আধ্যাত্মিক দর্শন ও মাটির টান একাকার হয়ে গেছে। ৫৫ বছরের সংগীতজীবনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন লালনসংগীতের প্রধান মুখ। ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান তিনি। ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্র অন্ধ প্রেম–এ ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ২০০৮ সালে জাপানের মর্যাদাপূর্ণ ফুকুওয়াকা পুরস্কারও পান।

 

ব্যক্তিগত জীবনে ফরিদা পারভীনের প্রথম স্বামী ছিলেন প্রখ্যাত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী আবু জাফর। তাঁদের সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও এক মেয়ে।

 

বাংলা লোকসংগীত, বিশেষ করে লালন সাঁইয়ের গানের প্রচার ও জনপ্রিয়তায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। জীবদ্দশায় তিনি বলেছিলেন, “লালনের গান ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না।” সেই আবেগ নিয়েই তিনি হয়ে উঠেছিলেন লালনগীতির প্রাণপুরুষের কণ্ঠস্বর।

 

ফরিদা পারভীনের প্রয়াণে দেশ হারাল এক অসামান্য কণ্ঠশিল্পী, আর লালনসংগীত হারাল তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রচারককে।

সব খবর