শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ ফারজানা হকের আদালতে শুনানির পর এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
মামলার শুনানিতে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল—লতিফ সিদ্দিকীর জামিন না চাওয়া। তার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম সাইফ জানান, আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী স্পষ্টভাবে বলেন, “যে আদালতের জামিন দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তার কাছে কেন জামিন চাইব? আমি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করব না, জামিন চাইব না।” একাধিকবার চেষ্টা করেও তিনি স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে অন্য আসামিরা জামিন চাইলেও লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় সেই প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
অন্যদিকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অধ্যাপক কার্জন আদালতের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য দেন। হাতে থাকা সংবিধানের বই উঁচু করে তিনি অভিযোগ করেন, আটক হওয়ার পর তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “সংবিধানের ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনজীবী নিয়োগ, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ও মানবিক অধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও আমাদের তা দেওয়া হয়নি। থানায় বা কারাগারে ফ্যান ছিল না, সাবান ছিল না, সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমরা ভিক্টিম, অথচ অপরাধীদের না ধরে আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
কার্জন আরও জানান, গোটা ঘটনাটি বিশ্বমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ সময় তিনি রাষ্ট্রের কাছে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন এবং আদালতের কাছে অবিলম্বে জামিন প্রার্থনা করেন।
এদিন সকালে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে তারা হাতকড়া, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় কাঠগড়ায় দাঁড়ান। পরে পুলিশ তাদের জ্যাকেট খুলে দেয়। এসময় লতিফ সিদ্দিকীকে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায়। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি মাথা নাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ‘মঞ্চ ৭১’ নামে সংগঠনের একটি গোলটেবিল বৈঠকে মব সৃষ্টি করে কিছু বহিরাগত। গত বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে স্লোগান দিয়ে একদল লোক সভাস্থলে প্রবেশ করে, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে ও অংশগ্রহণকারীদের লাঞ্ছিত করে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক কার্জনকেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে আটক করে।
এরপর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয় এবং শুক্রবার আদালতে তাদের হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করলেও আসামিপক্ষ থেকে অধিকাংশের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং অধ্যাপক কার্জন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
সবশেষে আদালত ১৬ জন আসামিকেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।