সর্বশেষ

আমি কোটি টাকার মালিক নই, সব টাকা দুদক নিয়ে যেতে পারে: সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৪৩
“আমি অবসরের পরও কোনো সুবিধা নেইনি। এমনকি রানা প্লাজা ধসের পর গঠিত আন্তর্জাতিক কমিশনে কাজ করার সময়ও আমি কোনো বেতন গ্রহণ করিনি।”
আমি কোটি টাকার মালিক নই, সব টাকা দুদক নিয়ে যেতে পারে: সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক

ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ১০ কাঠার প্লট নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামলার শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নাকচ করে এই আদেশ দেন।

 

শুনানির সময় ৮১ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, 

 

“আমি কোটি টাকার মালিক নই, আমার সব টাকা দুদক নিয়ে যেতে পারে। সবাই যেভাবে প্লটের জন্য আবেদন করে, আমিও সেভাবেই করেছি। এটি ২২-২৩ বছর আগের ঘটনা। সেই সময় আমি লিখেছিলাম, আমার হাতে টাকা নেই। অবসরে যাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করব। টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়। বিচারক হিসেবে আমার কাছে টাকা না থাকা অপরাধ হতে পারে না। অবসরের পর যে টাকা বাকি ছিল, সব টাকা আমি রাজউককে পরিশোধ করেছি। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আমাকে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হয়েছে।”

 

তিনি আরও বলেন, 

 

“আমি অবসরের পরও কোনো সুবিধা নেইনি। এমনকি রানা প্লাজা ধসের পর গঠিত আন্তর্জাতিক কমিশনে কাজ করার সময়ও আমি কোনো বেতন গ্রহণ করিনি। আমি অসুস্থ, একাধিকবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ডজনখানেক রোগে ভুগছি। আদালতের কাছে আমি ন্যায্য বিবেচনা প্রার্থনা করছি।”

 

তবে আদালত তার বক্তব্য ও যুক্তি আমলে না নিয়ে জামিন আবেদন নাকচ করেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

 

অন্যদিকে, দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদে দায়িত্ব পালনকালে খায়রুল হক মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজধানীর উত্তরায় ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জমির মূল্য ও সুদ পরিশোধ না করে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছেন, যা সরাসরি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে।

 

মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ মামলায় খায়রুল হকের পাশাপাশি রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও আসামির তালিকায় রয়েছেন।

 

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতির অভিযোগে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনা বিরল। এ কারণে মামলাটি জনমনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

 

রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর নেতারা বলছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এই মামলা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে সরকারপন্থী আইনজীবীদের একাংশের মতে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতিও আইনের ঊর্ধ্বে নন।

 

এদিকে খায়রুল হকের আইনজীবীরা বলেছেন, তাদের মক্কেল কোনো অনিয়ম করেননি এবং অবসরের পর সব বকেয়া টাকা পরিশোধ করেছেন। তারা উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করবেন।

 

গ্রেপ্তারের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে চিকিৎসক নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

 

পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে আইন অঙ্গনে এখন জোর আলোচনা চলছে।

সব খবর