জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছে বাংলাদেশ। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাস।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ দিকে জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবে বাংলাদেশ। এতে অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা। আগামী ২০২৬ সালের মে পর্যন্ত দেশ-বিদেশে এই প্রচারণা চলবে। নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপ থেকে পালাক্রমে। এবার পালা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের। যদিও ভৌগোলিকভাবে ইউরোপের অংশ সাইপ্রাস, তবে জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী তারা এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপের সদস্য। এ কারণে এই তিন দেশের মধ্যে লড়াই হবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সবসময় তাদের পাশে থেকেছে। এমনকি সম্প্রতি জাতিসংঘের ভোটাভুটিতেও ফিলিস্তিনের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে ঢাকা।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবী, বাংলাদেশ পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে প্রার্থিতা ঘোষণা করে। ফিলিস্তিন পরে প্রার্থী হয়েছে। তাই বাংলাদেশ তার প্রচারণা থেকে সরে আসতে রাজি নয়। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল এই প্রার্থিতাকে সহজভাবে নিতে রাজি নয়। অন্যদিকে সাইপ্রাসের বিরোধিতায় সক্রিয় তুরস্ক। ফলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রকাশ্য বিরোধিতা এখনো দেখা যায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের প্রার্থী মো. তৌহিদ হোসেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে। সেই সরকারের অবস্থান কেমন হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিল বাংলাদেশ। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিলেন। প্রায় ৪০ বছর পর আবারও জাতিসংঘের এই মর্যাদাপূর্ণ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ঢাকা।