২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। আট বছর পেরিয়ে গেলেও সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। প্রত্যাবাসনের আশায় দিন গুনছেন রোহিঙ্গারা, কিন্তু বাস্তবতা বলছে ফেরার পথ এখনও অনিশ্চিত।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পক্ষে থাকলেও মিয়ানমার সরকার এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুটি ব্যর্থ প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা রোহিঙ্গাদের আস্থার সংকট আরও বাড়িয়েছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গারা বলছেন, “আমরা ফিরে যেতে চাই, কিন্তু নিরাপত্তা ছাড়া ফিরব না।” তাদের দাবি, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকটের দীর্ঘস্থায়িত্ব বাংলাদেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংঘাত, মানবপাচার, মাদক ব্যবসা ও চরমপন্থার আশঙ্কা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সংকট তীব্রতর হচ্ছে।
পররাষ্ট্র বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো জরুরি। জাতিসংঘ, ওআইসি, আসিয়ানসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
এদিকে, রোহিঙ্গা তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়াচ্ছে। মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় শরণার্থী শিবিরে জীবনযাত্রার মানও দিন দিন নিচে নামছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “রোহিঙ্গা সংকট শুধু মানবিক নয়, এটি একটি কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত ইস্যু। এর সমাধান না হলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।”
বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। আট বছর পরও প্রশ্ন রয়ে গেছে—রোহিঙ্গারা কবে ফিরবে তাদের নিজভূমে?