বাংলাদেশে যৌন সহিংসতার মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (এইচআরসিবিএম)। সংস্থাটির দাবি, বিশেষ করে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী ও শিশুরা এই সহিংসতার প্রধান শিকার হচ্ছেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এইচআরসিবিএম জানায়, অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যৌন সহিংসতা “মহামারির” পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে দেশে ৩৪২টি ধর্ষণের মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ ভুক্তভোগীই ১৮ বছরের কম বয়সী কিশোরী। তবে এই সংখ্যাই পুরো চিত্র প্রকাশ করে না। সংস্থাটির দাবি, প্রকৃত সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে, যা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নীরবতা, সামাজিক ভয় এবং রাষ্ট্রীয় নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রকাশ পাচ্ছে না।
এইচআরসিবিএম জানায়, যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে তারা সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) দায়ের করেছে। আবেদনে সারাদেশে নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত যৌন সহিংসতার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে সংখ্যালঘু নারী ও শিশুরা সংগঠিতভাবে এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীরা দ্বিগুণ ঝুঁকির মুখে আছেন—একদিকে নারীর প্রতি বিদ্যমান সহিংসতা, অন্যদিকে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তারা বিশেষভাবে টার্গেট হচ্ছেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের রক্ষা করা, কিন্তু সরকার পরিস্থিতি আড়াল করছে।”
সংস্থাটি আরও দাবি করে, এই সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে মামলা নিতে গড়িমসি, তদন্তে অবহেলা এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপের কারণে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এইচআরসিবিএম-এর মতে, এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু নারীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র এবং দ্রুত বিচার ব্যবস্থার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি সতর্ক করেছে, যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।