দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। সংক্রমণ বেড়েছে ৮১ শতাংশ। এ বছর ইতোমধ্যেই শনাক্ত হয়েছেন ৪১ হাজার ৮৩১ জন রোগী, যেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত ছিলেন ২৩ হাজার ১০৮ জন।
গতকাল রবিবার একদিনে সর্বোচ্চ ১২ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। এদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নতুন করে ৭৪০ জন রোগী। মৃতদের মধ্যে পাঁচজন বরিশাল, তিনজন ঢাকা উত্তর, দুইজন ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের একজন করে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানান, এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অর্ধেকের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, ফলে চিকিৎসা দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকছে না। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ ও দ্রুত ভর্তি হলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি, অকার্যকর মশকনিধন এবং জনগণের অংশগ্রহণের অভাব ডেঙ্গু বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার আশঙ্কা করছেন, অক্টোবর মাসে প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। তিনি কমিউনিটি-ভিত্তিক মশা নিয়ন্ত্রণ ও ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহারের ওপর জোর দেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, বেশিরভাগ রোগী সেকেন্ডারি সংক্রমণে ভুগছেন, যা বেশি মারাত্মক। ডেন-২ সেরোটাইপ থাকলে জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
অঞ্চলভিত্তিক হিসেবে বরিশাল বিভাগে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি—এখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ১৭০ জন, মৃত্যু ২৭ জন। ঢাকাতেও মৃত্যু ও সংক্রমণ বেড়েছে। ঢাকা দক্ষিণে মারা গেছেন ৮৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৫৬ জন; ঢাকা উত্তরে মৃত্যু ২২ জন ও আক্রান্ত ৪ হাজার ৪৭০ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে দুই মাসে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু শনাক্তে পর্যাপ্ত এনএস১ কিট মজুত রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতা ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।