বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাম্প্রতিক সমীক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণের সংখ্যা গত বছরের মোট ঘটনার প্রায় সমান হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং নারীবিদ্বেষী সামাজিক আবহকে এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মহিলা পরিষদের ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন: ২০২৪ সমীক্ষা’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৩৬৪ জন, আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫৪ জনে। যৌন নিপীড়ন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক এবং উত্ত্যক্তকরণের ঘটনাও আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি অপরাধে জড়িত, আবার ভুক্তভোগীদের বড় অংশও এই বয়সসীমার মধ্যে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজও বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের এই প্রবণতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে পুলিশ মুখপাত্র এটিকে “সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি” বলে উল্লেখ করেছেন এবং জানিয়েছেন, প্রথম ছয় মাসে ১১ হাজারের বেশি নারী ও শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নারীবিদ্বেষী সংস্কৃতি এই সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে। একই অপরাধীরা বারবার অপরাধ করছে, যার পেছনে রাজনৈতিক মদদও রয়েছে।”
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করার প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে—৬২ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে। তবে পারিবারিক সহিংসতা, মামলা নিষ্পত্তি ও ফলোআপ সংবাদের অভাব তথ্য বিশ্লেষণে সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে।
নারী অধিকারকর্মীরা মনে করছেন, সমাজে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব, পোশাক বা আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা, এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়—সব মিলিয়ে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারা নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি সংস্কার, দ্রুত বিচার এবং গণমাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা, জবাবদিহি এবং নারীর প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।