বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকগুলো বর্তমানে ২০৯ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া বিজ্ঞাপন বিলের কারণে চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে। সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উভয়ের কাছেই এই বিল আটকে থাকায় সংবাদপত্রগুলোর নগদ অর্থপ্রবাহে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা সম্পাদকীয় স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার মানকে হুমকির মুখে ফেলছে।
১৯টি শীর্ষ দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলা পত্রিকাগুলোর বকেয়া প্রায় ১২২ কোটি টাকা এবং ইংরেজি দৈনিকগুলোর ৮৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে দ্য ডেইলি স্টারের (২৬ কোটি), যুগান্তর (২৫ কোটি), কালের কণ্ঠ ও ইত্তেফাকের (১৮ কোটি করে)। বাংলাদেশ প্রতিদিন, সমকাল, দেশ রূপান্তর, নিউ এজ, ঢাকা ট্রিবিউনসহ অন্যান্য পত্রিকাও কোটি কোটি টাকার বকেয়ায় জর্জরিত।
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের প্রধান আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন, যার বড় অংশ আসে সরকারি মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও টেলিকম খাত থেকে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে বিল পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। ফিল্ম ও প্রকাশনা অধিদফতর (ডিএফপি) একাই ৩৬ কোটি টাকার বিল আটকে রেখেছে, যার বেশিরভাগই ২০১১–২০২২ সালের অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত।
শিল্পসংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন, এই বিলম্ব সংবাদপত্রগুলোকে ব্যয় সংকোচন, বেতন স্থগিত এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিনিয়োগ কমাতে বাধ্য করছে। ফলে মুদ্রণ, বিতরণ ও মানবসম্পদ পরিচালনায় সংকট তৈরি হয়েছে।
এক সম্পাদক বলেন, “বকেয়া বিজ্ঞাপন বিলের কারণে কার্যক্রমে স্থবিরতা আসে। সরকারকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে প্রকৃত প্রচারসংখ্যার ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন বরাদ্দ হয়।”
মিডিয়া সংস্কার কমিশনের সদস্য শামসুল হক জাহিদ জানান, “সরকারি বিজ্ঞাপন ৩০–৪০% কমে গেছে, বেসরকারি খাতেও একই প্রবণতা। এই সংকট আগে কখনও এত ভয়াবহ ছিল না।”
অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, “অনেক তালিকাভুক্ত পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় না, তবুও তারা সরকারি বিজ্ঞাপন পায়। এতে মূলধারার পত্রিকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংবাদপত্রের ধরন, মান ও প্রচারসংখ্যা অনুযায়ী বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধের নিয়ম প্রণয়ন এবং কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা জরুরি। তা না হলে দেশের সংবাদপত্র শিল্পের মেরুদণ্ড আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।