বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, হুমকি ও মব সন্ত্রাস এখন নিয়মিত ঘটনা। সর্বশেষ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসে বিচারকের সামনেই সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে, যা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার আদালতে জামিন শুনানির সময় সময় টিভির প্রতিবেদক আসিফ হোসেন ও বাংলা আউটলুকের প্রতিনিধি মুক্তাদির রশীদ রোমিওকে আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি ও তার সহযোগীরা মারধর করেন। সাংবাদিক আসিফ বিচারকের উদ্দেশে চিৎকার করে জানান, “আমাকে মারধর করা হচ্ছে।” কিন্তু বিচারক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার গ্রেপ্তারের ঘটনাতেও পুলিশ ও আদালতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আদালত প্রাঙ্গণে তার গলায় চেপে ধরে কণ্ঠরোধ করে পুলিশ, যা আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএফজে নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা আসক-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ২১৮ জন সাংবাদিক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন, ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ১১ জন হত্যার হুমকি পেয়েছেন। টিআইবির প্রতিবেদন বলছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৬৬ জনকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এবং মতিঝিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই পাল্টা মামলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, “আদালতের মধ্যেই যদি সাংবাদিকরা নিরাপত্তা না পান, তাহলে তারা কোথায় সুরক্ষা পাবেন?” তিনি আরও বলেন, “তথ্য প্রকাশ করলেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়, মামলা হয়, অথচ সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না।”
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “বাংলাদেশে এখন যে কোনো সময় মব তৈরি করে কাউকে হত্যা করা সম্ভব। বিচারক ও পুলিশ যদি দৃশ্যমান হামলার পরও ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আইনের শাসন কোথায়?”
এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও বিচার পাওয়ার অধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। শুধু বিবৃতি নয়, প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ—আইনজীবী, পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগেই সম্ভব হবে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।