বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও হুমকির ঘটনায় দায়মুক্তি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ১৩টি দেশের কূটনৈতিক মিশন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা অপরাধের দায়মুক্তি বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবসের ১১তম বার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (২ নভেম্বর) মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের (এমএফসি) বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে।
যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের সঠিক তদন্ত, বিচার নিশ্চিতকরণ এবং দায়মুক্তির অবসান—এখন সময়ের দাবি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে সব পক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছয় মহাদেশের ৫০টিরও বেশি দেশ এই উদ্যোগের সদস্য। তবে এবারের বিবৃতিতে সই করেছে ১৩টি দেশ—অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, কসোভো, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র এমএফসির সদস্য হলেও যৌথ বিবৃতিতে তাদের সই নেই।
বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণমাধ্যম খাত সংস্কারে সরকার ঘোষিত প্রতিশ্রুতি ও সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষায় মিডিয়া রিফর্ম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং পেশাগত স্বাধীনতা রক্ষায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়।
এছাড়া নারী সাংবাদিকদের প্রতি বৈষম্য, হয়রানি ও বিশেষভাবে লক্ষ্য করে পরিচালিত অনলাইন সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানায় মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সংবাদমাধ্যমে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা এবং নারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অনলাইন নির্যাতন বন্ধ করা জরুরি। সহিংসতা ও বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখে এমন কাঠামোগুলো ভেঙে ফেলা না গেলে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে উঠবে না।”
বিবৃতির শেষাংশে সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিকরা যেন ভয়, হুমকি বা হয়রানির মুখে না পড়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন—এটি শুধু মানবাধিকার নয়, বরং একটি মুক্ত ও আধুনিক রাষ্ট্রের পরিচয়। গণমাধ্যম যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে, তবে নাগরিকের তথ্য অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ দমন ও বিচার নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এমন অবস্থান বাংলাদেশের মিডিয়া সেক্টরের জন্য বড় বার্তা। তারা মনে করেন, আইনগত পরিবর্তন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দায়মুক্তির প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব নয়।