সর্বশেষ

এমআরডিআই এবং আইএমএসের সভা

গণমাধ্যম সংস্কারে শুধু সাংবাদিক নয়, মালিকদেরও জবাবদিহিতা জরুরি

প্রকাশিত: ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪০
গণমাধ্যম সংস্কারে শুধু সাংবাদিক নয়, মালিকদেরও জবাবদিহিতা জরুরি

দেশে গণমাধ্যমের মান উন্নয়ন ও টেকসই সংস্কারের জন্য শুধু সাংবাদিকদের নয়, গণমাধ্যম মালিকদের জন্যও নৈতিকতার গাইডলাইন থাকা জরুরি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দ্য ডেইলি স্টার ভবনে মঙ্গলবার আয়োজিত এক সভায় এই মত উঠে আসে। সভাটি আয়োজন করে মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট সংস্থা মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এমআরডিআই) এবং ডেনমার্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া সাপোর্ট (আইএমএস)।

 

সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে ৫ বছর মেয়াদি একটি কৌশলগত অ্যাডভোকেসি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। এই পরিকল্পনায় সাতটি মূল ফ্রেমওয়ার্কের কথা বলা হয়—গণমাধ্যমের স্বাধীনতা; নিবন্ধন, মালিকানা ও পরিচালনায় স্বচ্ছতা; গণমাধ্যমের নিজস্ব নীতিমালা; সাংবাদিকদের কল্যাণ ও মর্যাদা রক্ষা; আইনি সংস্কার; সমতা ও অন্তর্ভুক্তি এবং সাংবাদিকতার শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন।

 

এমআরডিআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দ সামিউল বাশার অনিক এবং নন্দিতা তাবাসসুম খান এই পরিকল্পনা নিয়ে উপস্থাপনা দেন। তাঁরা বলেন, গণমাধ্যম খাতে শৃঙ্খলা আনতে হলে সাংবাদিকদের পাশাপাশি মালিকদেরও দায়বদ্ধ হতে হবে।

 

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, দেশে অসংখ্য সংবাদমাধ্যম গড়ে উঠছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কে প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকতা করছে, কে শুধু পরিচয় ব্যবহার করছে, তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “নিউমিডিয়া আলাদা কিছু নয়, সাংবাদিকতার মান নির্ধারণ করে কাঠামোয় আনতে হবে। মিডিয়া ওয়াচের মতো ব্যবস্থা দরকার, যাতে নাগরিক উদ্যোগের মাধ্যমে গণমাধ্যমের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।”

 

সভায় বক্তারা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুর প্রসঙ্গেও কথা বলেন। কামাল আহমেদ বলেন, তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে চাপ আসার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

 

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, “বাংলাদেশে যারা গণমাধ্যমে বিনিয়োগ করেন, তাঁদের অনেকেই পেশাদার উদ্দেশ্যে আসেন না; বরং রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থে আসেন। এ কারণে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম পরিবেশ গড়ে উঠতে পারেনি।”

 

সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী বলেন, “গণমাধ্যমকে টিকে থাকতে গিয়ে যে পুঁজির কাছে যেতে হয়, তার পূজা দিয়ে ফিরতে হয়। এর পরিণতি গণমাধ্যমের জন্য ভালো হয় না। মালিকদের বিনিয়োগে নৈতিকতার গাইডলাইন থাকা জরুরি।”

 

পিআইবি মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, সরকার একা গণমাধ্যম খাতের অব্যবস্থা দূর করতে পারবে না। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

 

যমুনা টেলিভিশনের সিইও ও কমিশনের সদস্য ফাহিম আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম নিয়ে নানা আলোচনা হলেও এর স্বাধীনতা নিয়ে আর কেউ কথা বলছে না।

 

দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ জানান, সরকারের প্রতি কিছু সুপারিশ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপনের সংকটের কারণে গণমাধ্যম এখন বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপে আছে।

 

ডেনমার্কভিত্তিক আইএমএসের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান লার্স হেইবার্গ বাসেল বলেন, “গণমাধ্যমে টেকসই পরিবর্তনের পরামর্শ স্থানীয় পর্যায় থেকে আসতে হবে। আইএমএস স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে মিলে সাংবাদিকদের জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে।”

 

সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী, চ্যানেল ২৪–এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, ইউনেসকোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুসান ভাইজ, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজসহ অনেকে।

 

সভা পরিচালনা করেন এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান।

সব খবর