সর্বশেষ

স্বর্ণসম্রাট মানসা মুসা: আফ্রিকার ইতিহাসে এক বিস্ময়

ফিচার ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৭
স্বর্ণসম্রাট মানসা মুসা: আফ্রিকার ইতিহাসে এক বিস্ময়

মানসা মুসা—একটি নাম, যা শুধু মালির ইতিহাস নয়, বিশ্ব অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ধারায়ও এক কিংবদন্তি। ১৪শ শতকে তাঁর নেতৃত্বে মালি সাম্রাজ্য পরিণত হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে। ইতিহাসবিদদের মতে, সেই সময় বিশ্বের অর্ধেক সোনার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতেন মানসা মুসা। তাঁর রাজত্বে বাণিজ্য, শিক্ষা, স্থাপত্য ও ধর্মীয় চর্চার অভূতপূর্ব বিস্তার ঘটে।

 

মানসা মুসা শুধু ধনসম্পদে নয়, জ্ঞান ও সংস্কৃতিতেও ছিলেন অগ্রণী। তিনি মালির ঐতিহাসিক শহর টিম্বাকটুতে গড়ে তুলেছিলেন একটি বিশ্বমানের শিক্ষাকেন্দ্র। সেখানে মসজিদ, পাঠাগার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি আফ্রিকাকে পাণ্ডিত্যের এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তাঁর রাজত্বকালকে আফ্রিকার “স্বর্ণযুগ” হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

১৩২৪ সালে মানসা মুসা মক্কা যাত্রা করেন। প্রায় ৪ হাজার মাইল দীর্ঘ এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গে ছিল কয়েক হাজার সেনা, ক্রীতদাস ও প্রজা। যাত্রার শোভা বাড়াতে ছিল ৫০০ সেনা, যাঁরা শুধু সোনা বহনের দায়িত্বে ছিলেন। উট ও ঘোড়ায় বোঝাই ছিল সোনার থলি।

 

 

কথিত আছে, এই যাত্রাপথে তিনি এত বেশি সোনা দান করেছিলেন যে মিশরের কায়রোতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সোনার প্রভাবে কায়রোর বাজারে মূল্যবৃদ্ধি এতটাই হয়েছিল যে তা স্বাভাবিক হতে কয়েক বছর লেগে যায়।

 

কিংবদন্তি অনুযায়ী, মক্কা থেকে ফেরার পথে মানসা মুসা আফ্রিকার কোনো এক গোপন স্থানে বিশাল সোনার ভান্ডার লুকিয়ে রাখেন। ধারণা করা হয়, রাজ্য বিপদে পড়লে বা প্রয়োজন হলে সেই সোনা ব্যবহার করবেন—এই ছিল তাঁর পরিকল্পনা।

 

১৩৭৫ সালে তৈরি কাতালান অ্যাটলাস নামক একটি মানচিত্রে দেখা যায়, টিম্বাকটুতে সোনার সিংহাসনে বসে আছেন এক রাজা, হাতে সোনার টুকরো। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এই চিত্রটি মানসা মুসারই প্রতিকৃতি। এটি তাঁর ঐশ্বর্য ও প্রভাবের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রতীক।

 

মানসা মুসা শুধু একজন রাজা ছিলেন না—তিনি ছিলেন এক দৃষ্টান্ত, যিনি সম্পদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে আফ্রিকাকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছিলেন। তাঁর রাজত্ব আজও ইতিহাসের পাতায় সোনালি অক্ষরে লেখা আছে আর তাঁর মক্কা যাত্রা, দানশীলতা ও গোপন ভান্ডার কিংবদন্তির মতো বেঁচে আছে মানুষের কল্পনায়।

সব খবর

আরও পড়ুন

পালাতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, কূটনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক উত্তেজনায় উত্তাল এক দিন

৯ ডিসেম্বর ১৯৭১: বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ পালাতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, কূটনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক উত্তেজনায় উত্তাল এক দিন

বেগম রোকেয়ার শিক্ষাব্রত

রোকেয়া দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি বেগম রোকেয়ার শিক্ষাব্রত

স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে বাঙালি, বিশ্বরাজনীতির ময়দানে পাকিস্তানের পতন

একাত্তরের এই দিন | ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে বাঙালি, বিশ্বরাজনীতির ময়দানে পাকিস্তানের পতন

৪ ডিসেম্বর ১৯৭১: বিজয়ের পথে মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘোরানো এক দিন

জাতিসংঘে উত্তেজনা, রণাঙ্গনে দুর্বার অগ্রগতি ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১: বিজয়ের পথে মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘোরানো এক দিন

ভারতে পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পাকিস্তানি সেনা ও বিহারীদের হাতে ৪১৩ জনের মৃত্যু

নীলফামারীর গোলাহাট গণহত্যা ভারতে পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পাকিস্তানি সেনা ও বিহারীদের হাতে ৪১৩ জনের মৃত্যু

আলাউদ্দিন খাঁর পুণ্যভূমিতে এ কোন অন্ধকার

তিতাসপাড়ের সুর আজ নিঃশব্দ আলাউদ্দিন খাঁর পুণ্যভূমিতে এ কোন অন্ধকার

২০২৫ সালে প্রবাসীদের জন্য সেরা দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ: জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সংযোগে এগিয়ে যাঁরা

২০২৫ সালে প্রবাসীদের জন্য সেরা দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ: জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সংযোগে এগিয়ে যাঁরা

এক জীবনে কতজনকে সামলাতে পারে আমাদের মস্তিষ্ক?

সম্পর্কের সীমা জানে ‘নিওকর্টেক্স’ এক জীবনে কতজনকে সামলাতে পারে আমাদের মস্তিষ্ক?