বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ জলবায়ু প্রতিবেদন ‘An Unsustainable Life: The Impact of Heat on Health and the Economy of Bangladesh’-এ ঢাকাকে ‘গ্লোবাল হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। একই সময়ে ‘অনুভূত তাপমাত্রা’ বেড়েছে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ঢাকার অতিরিক্ত উষ্ণতার পেছনে রয়েছে ঘনবসতি, উচ্চ ভবন, সবুজ এলাকা হারানো এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ। ১৯৮৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ঢাকার ৪৭ শতাংশ সবুজ অঞ্চল বিলীন হয়েছে। কংক্রিটের বিস্তার, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বাতাস চলাচলের পথ সংকুচিত হওয়ায় শহরটি তাপ ধরে রাখছে বেশি সময় ধরে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে গরম ৯টি বছর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু সংস্থা কপারনিকাসও ২০২৩ সালকে ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিশ্বব্যাংক ও সিসিসিএস উভয় সংস্থাই মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে দেখছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, শিল্পায়ন, বনভূমি ধ্বংস ও দূষণ এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। অতীতে যে তীব্র তাপপ্রবাহ ৫০ বছরে একবার ঘটতো, এখন তা ১–৫ বছর অন্তর ঘটছে।
ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্টের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন (১৫.৯ গিগা টন), যুক্তরাষ্ট্র (৬), ভারত (৪.১), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (৩.২) এবং রাশিয়া (২.৭)। এই দেশগুলোর অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা গড়ে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবও ভয়াবহ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অতিরিক্ত গরমের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ১.৩৩ থেকে ১.৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির ০.৩–০.৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ২১ হাজার কোটি।
গরমের কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শারীরিক অসুস্থতায় গ্রীষ্মে গড় কর্মদিবস হার ১.৪ দিন, শীতে ১.২ দিন। মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে গ্রীষ্মে ২.৩ দিন এবং শীতে ১.৯ দিন কাজ হারানোর প্রবণতা দেখা গেছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার নারীদের তুলনায় বেশি, বিশেষ করে ৩৬–৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগর পরিকল্পনা, সবুজায়ন ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।