সর্বশেষ

নীতিমালা ভঙ্গ করে বিএনপি নেতাকে ইজারা

ধ্বংসের মুখে সুনামগঞ্জের খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ খাসিয়ামারা নদী

জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১৪
ধ্বংসের মুখে সুনামগঞ্জের খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ খাসিয়ামারা নদী
খাসিয়ামারা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন। ছবি: বণিক বার্তা

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদী বালি-পাথর মিশ্রিত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। তবে নীতিমালা ভঙ্গ করে এ নদীর ইজারা দেয়ায় আজ নদী ও আশপাশের জনপদ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি কোনো খাসজমি বা নদী ইজারা নিতে পারেন না। অথচ অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতা ও সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ নদীর ইজারা নিয়েছেন। এরপর থেকেই নদীতে শুরু হয়েছে অবাধ ড্রেজার তাণ্ডব।

 

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত খাসিয়ামারা নদীতে জেলা প্রশাসন চলতি বছরের ৬ মে ৬০ লাখ টাকায় ইজারা দেয়। ইজারার শর্ত ছিল সনাতন পদ্ধতিতে সীমিত বালি উত্তোলন। কিন্তু ওই শর্ত ভেঙে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রকাশ্যে চলছে বালি তোলার মহোৎসব। এতে নদীর দুই পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে, বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও বাজার। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার বালি তোলা হচ্ছে এবং নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেয়ায় সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।

 

সরজমিনে দেখা গেছে, নদীর রাবার ড্যামসংলগ্ন এলাকা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত নৌকা দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। রাবার ড্যামের ওপর দিয়ে নিয়মিত ইঞ্জিনচালিত নৌকা ওঠানামা করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ড্যামের রাবার। অভিযোগ উঠেছে, ইজারাদারের লোকজন স্থানীয়দের প্রতিবাদ দমাতে ভয়ভীতি ও মামলা ব্যবহার করছে।

 

স্থানীয় কৃষক আব্দুল আউয়াল জানান, লাগামহীন ড্রেজার তাণ্ডবে নদীর গভীরতা বেড়ে যাচ্ছে, ফলে বন্যার সময় দুই তীর ভেঙে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা কৃষকরা নদীভাঙনে সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ব।”

 

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, “ইজারাদাতা কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারে না। সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামও ধ্বংস হচ্ছে। ইজারা বাতিল করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা জরুরি।” একই সুরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা বলেন, “এই প্রক্রিয়ায় ড্রেজার দিয়ে বালি তোলা পুরোপুরি অবৈধ। পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনবে।”

 

অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, তিনি সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং ড্রেজার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে জনপ্রতিনিধিকে কীভাবে ইজারা দেয়া হলো—এ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি জানান, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে রাবার ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলা সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক দাবি করেন, তাদের কাছে ড্রেজার দিয়ে বালি তোলার কোনো তথ্য নেই। তবে বিষয়টি নজরে এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, অবিলম্বে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই মানচিত্র থেকে মুছে যাবে খাসিয়ামারা নদী। বন্যা ও ভাঙনে বিপন্ন হবে হাজার হাজার মানুষ, ধ্বংস হবে জীববৈচিত্র্য ও কৃষি।

সব খবর