সর্বশেষ

‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত-শিক্ষক নিয়োগ; বাতিলের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৭
‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত-শিক্ষক নিয়োগ; বাতিলের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

সাহিত্য, সংস্কৃতি, আউল, বাউলের দেশ বাংলাদেশ। যেখানে মাটির টানে গান আসে হৃদয়ের গভীর থেকে, আসে কবিতা। এই মাটির সুধা গন্ধ মেখে বিখ্যাত হয়েছেন কত শত কবিয়াল। সেই কবিয়ালের দেশে এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিও দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আসক তাদের এই নিন্দার কথা জানায়।

 

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই দাবি ও অবস্থান শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমাজে বিভেদ ও বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রচেষ্টা।  

 

আইন সহায়তাকারী মানবাধিকার সংস্থাটি আরও মনে করে, বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা ও শিল্প-সাহিত্যে অংশগ্রহণের অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দেশ, যেখানে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক আন্দোলন এবং সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সংগীত ও শিল্প-সংস্কৃতি ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই  সংগীত শিক্ষা শুধু বিনোদনের বিষয় নয়— এটি মানসিক বিকাশ, নৈতিক শিক্ষা, সৃজনশীলতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। এই ঐতিহ্যকে রক্ষা ও বিকশিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং সামাজিক সম্প্রীতির অপরিহার্য শর্ত।  বিবৃতিতে যা উল্লেখ করেছে আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক)।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই প্রেক্ষাপটে  সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবি শুধু সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি নয়, বরং আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে— শিশুদের সার্বিক মানসিক বিকাশের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও চর্চার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । তবে দুঃখজনকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু গোষ্ঠী সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবিকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিল্প-সংস্কৃতিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের প্রচেষ্টা কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং সমাজকে একপেশে করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করছে, যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফলাফল আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সংস্কৃতির ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে মনে করে, বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে, সেটি আলাদা নীতিগত আলোচনার বিষয়ও হতে পারে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উত্থাপন করা যেতে পারে। তবে কোনও অবস্থাতেই সেই দাবিকে অজুহাত করে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা ব্যাহত করা কিংবা সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের মতো দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের প্রচেষ্টা কেবল সাংস্কৃতিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না, বরং সামাজিক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদী চেতনার ওপর আঘাত হানে।

সব খবর