সর্বশেষ

উচ্চশিক্ষায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা

পরিকল্পনাহীন সম্প্রসারণে উদ্বেগ, আসন পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩২
পরিকল্পনাহীন সম্প্রসারণে উদ্বেগ, আসন পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত মিলেছে। এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাশের হার গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমান পর্যায়ে প্রায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

দেশের পাবলিক-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, প্রকৌশল, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো মিলিয়ে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে মোট আসন রয়েছে ১৮ লাখ ৭ হাজার ৫৭৬টি। কিন্তু এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। অর্থাৎ, সব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ফাঁকা থাকবে প্রায় ১১ লাখ আসন।

 

শিক্ষাবিদদের মতে, গত এক দশকে পরিকল্পনা ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় ও আসনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এই সংকটের মূল কারণ। তারা বলছেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আসন বৃদ্ধির ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অনেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-অধিভুক্ত কলেজ ও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক অধ্যাপক বলেন, “দেশে উচ্চশিক্ষার বিস্তার হলেও মানোন্নয়ন হয়নি। প্রয়োজনের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও আসন বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এখনই আসন পুনর্বিন্যাস জরুরি।”

 

শিক্ষাবিদদের একাংশ মনে করেন, উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নয় যাদের সক্ষমতা ও আগ্রহ আছে, তাদের জন্যই এটি হওয়া উচিত। অন্যদিকে, কর্মমুখী শিক্ষা, টেকনিক্যাল ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক শিক্ষায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

অন্যদিকে, এবারও শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রতিযোগিতা তীব্র হবে। মেডিক্যাল, প্রকৌশল ও শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৪০ হাজার আসনের বিপরীতে লড়বেন ৪ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষার্থী, অর্থাৎ প্রতিটি আসনের জন্য গড়ে ১২ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট ও মেডিক্যালে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

তবে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন না, তাদের শেষ ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (পাস ও সম্মান), কারিগরি ও সমমান পর্যায়ে আসন রয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫টি। এছাড়া, ঢাকার সাত সরকারি কলেজে ২৩ হাজার ৬৩০টি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৬৪ হাজার ৫২৯টি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭ হাজার ৫৯৩টি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারিতে ৫ হাজার ৬০০টি এবং টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ১ হাজার ৪৪০টি আসন রয়েছে।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, “ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এখন মেধাভিত্তিকভাবে শিক্ষার্থী বাছাই করা হচ্ছে। এতে যোগ্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।”

 

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, এখন সময় এসেছে সংখ্যা নয়, মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও শিল্প-উপযোগী মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দেওয়ার। অন্যথায় উচ্চশিক্ষা খাতে ফাঁকা আসনের এই প্রবণতা আরও প্রকট হবে।

সব খবর

আরও পড়ুন

প্রাথমিক থেকে বাদ সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক

শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলবাদি প্রভাব প্রাথমিক থেকে বাদ সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক

ড্যাফোডিল–সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষের উত্তাপ এখনো ক্যাম্পাসজুড়ে

কাটেনি শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক ড্যাফোডিল–সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষের উত্তাপ এখনো ক্যাম্পাসজুড়ে

সাভারের ঘটনায় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর সংকটের সংকেত

শিক্ষার্থীদের সহিংসতা সাভারের ঘটনায় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর সংকটের সংকেত

১৩ বছরে কমেছে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকের সংখ্যা, বেড়েছে প্রতিষ্ঠান

শিক্ষক সংকটে দুর্বল ফল শিক্ষা খাতে ১৩ বছরে কমেছে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকের সংখ্যা, বেড়েছে প্রতিষ্ঠান

তিন ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ইউজিসির সতর্কতা

তিন ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ইউজিসির সতর্কতা

২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাসের হার

শিক্ষায় ‘গলদ’ না অন্য কিছু? ২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাসের হার

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত

সারা দেশে ফেল ৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী, পাসের হার ৫৮.৮৩%

এইচএসসি ফলাফল প্রকাশ সারা দেশে ফেল ৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী, পাসের হার ৫৮.৮৩%