সর্বশেষ

বৈষম্য-অবমূল্যায়নে শিক্ষকতার প্রতি অনীহা বাড়ছে

প্রকাশিত: ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১৫:১৮
বৈষম্য-অবমূল্যায়নে শিক্ষকতার প্রতি অনীহা বাড়ছে

গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ক্যাডার থেকে অন্য ক্যাডার বা ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন অনেক শিক্ষক। শুধু তাই নয়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষকও চাকরি ছেড়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে—শিক্ষকতার মতো সম্মানজনক পেশা কেন ছাড়ছেন তারা?

 

বৈষম্য ও পদোন্নতি বঞ্চনা

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য, সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়া, সম্মান ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি—এসব কারণে শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডার ছাড়ছেন। বিসিএস পরীক্ষায় পছন্দের ক্যাডার না পাওয়াও অনেককে এই ক্যাডার থেকে অন্যত্র যাওয়ার প্ররোচনা দিচ্ছে। পাশাপাশি পেশাগত ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতাও বড় কারণ।

 

যদিও ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন, প্রশাসন ক্যাডারের প্রভাবের কারণে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়েই আসছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এ বঞ্চনা দূর হবে বলে আশা করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি।

 

চাকরিতে অনিশ্চয়তা

 

শিক্ষকরা জানান, তাদের স্থায়ী হতে চার থেকে ছয় বছর লেগে যায়, কখনও কখনও ১৬ বছর পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়। আবার পদোন্নতিও নিয়মিত হয় না। সরকারি কলেজ অধ্যক্ষদের পদ চতুর্থ গ্রেডে হলেও অর্জিত ছুটি পর্যন্ত পান না অনেক শিক্ষক।

 

অন্যদিকে শিক্ষকরা বাড়তি কাজের চাপও সামলান। শুধু পাঠদান নয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, টিকাদান কর্মসূচি কিংবা ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বেও যুক্ত থাকতে হয় তাদের। কিন্তু এসব কাজে রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা নিরাপত্তা পান না।

 

চাকরি ছাড়ার প্রবণতা

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসেই অন্তত ১০ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা অন্যত্র যোগদানের অনুমতি পেয়েছেন। এর মধ্যে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হয়েছেন, কেউ প্রশাসন বা কর কমিশনার ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। শুধু গত দুই মাসেই অর্ধশতাধিক শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ৪৪তম ও ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুমতি নিয়েছেন।

 

বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা বেতন কাঠামো ও সুবিধা না থাকায় হতাশ হয়ে চাকরি ছাড়ছেন। ২০২৩ সালে অন্তত ১৭ জন মাধ্যমিক শিক্ষক অন্যত্র যোগদানের অনুমতি পান। অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন।

 

বিশেষজ্ঞদের মতামত

 

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে. চৌধুরীর মতে, “শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানো না গেলে এ পেশা মেধাবীদের কাছে আকর্ষণীয় থাকবে না। একই সঙ্গে ‘স্বাধীন শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে শিক্ষকদের অভিযোগ ও সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

 

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অধ্যাপকদের চতুর্থ গ্রেডে নামানো হয়েছে। শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুবিধা বাড়াতে না পারলে এই পেশা থেকে মানুষ সরে যাবে।”

 

উত্তরণের পথ

 

শিক্ষাবিদরা মনে করেন—

 

শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো প্রয়োজন।

পদোন্নতিতে বিলম্ব দূর করতে হবে।

বদলির ক্ষেত্রে সুষম নীতি নিশ্চিত করতে হবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে শুধু শিক্ষকতা করতে আগ্রহীরাই আসতে পারেন।

শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

অন্যথায় শিক্ষকতার মতো মর্যাদাপূর্ণ পেশা আরও বেশি মানুষ ছাড়তে বাধ্য হবেন।

সব খবর