সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা গতকাল ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে। সরকারের হুমকি সত্ত্বেও তারা পরীক্ষায় অংশ নেননি। ফলে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা বছর প্রস্তুতি নেওয়ার পর শেষ মুহূর্তে এসে পরীক্ষার অনিশ্চয়তায় পড়েছে তারা।
প্রধান শিক্ষকরা একাই পরীক্ষা পরিচালনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। অনেক কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা দেখাদেখি করেছে, খাতা ছিঁড়েছে, আর যেখানে প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন না সেখানে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে, আবার কোথাও বিশৃঙ্খলার মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অভিভাবকরা এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সহকারী শিক্ষক অভিভাবকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলেও জানা গেছে।

চার দফা দাবিতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। অনেক স্কুল তালাবদ্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা গেট থেকে ফিরে গেছে। নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্র না খোলা এবং শিক্ষকরা উপস্থিত না থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হতাশা আরও বেড়েছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা সংগ্রহ করেছে। গতকাল সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ জরুরি চিঠি দিয়ে দুপুরের মধ্যে উপস্থিতির তথ্য দিতে নির্দেশ দেয়। সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক প্রায় ৩৫ হাজার, বাকিরা সহকারী। প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৯৭ লাখ, যার মধ্যে সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ছে ১ কোটি ৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক স্তরে ৭২১ সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ লাখ ৭১ হাজার।

রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরপুরের সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি, চট্টগ্রামের আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত ছিল। ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজিয়েট স্কুলেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশ দিয়েছে, বার্ষিক, নির্বাচনি ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার কোনো শৈথিল্য বা অনিয়ম দেখা গেলে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেছেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সরকারি কর্মচারী বিধি লঙ্ঘনের শামিল। এজন্য তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, চাকরির সময় তারা দশম গ্রেডে থাকার শর্ত মেনে নিয়েছিলেন, এখন নবম গ্রেড দাবি করা অন্যায্য। নবম গ্রেডে বিসিএস এডমিন ক্যাডাররা আসেন, তাই এটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিষয়। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা শিক্ষক হিসেবে চরম অনৈতিক কাজ।
তিনি আরও বলেন, সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। পরীক্ষা অবশ্যই নিতে হবে, অন্যথায় শাস্তি দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকরা জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পরীক্ষা দিতে আগ্রহী। তাই শিক্ষকরা দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণে ফিরবেন, নাহলে শাস্তির মুখোমুখি হবেন।