বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার (৩১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে এ হামলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষক সমিতি।
জানা গেছে, পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে “কম্বাইন্ড ডিগ্রি” চালুর দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। রোববার সন্ধ্যায় তারা মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় হঠাৎ লাঠিসোটা হাতে বহিরাগত কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় নারীসহ বহু শিক্ষার্থী আহত হন।
অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলন দমন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কিছু শিক্ষকের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে বহিরাগতদের আনা হয়েছিল। এক শিক্ষার্থী জানান, “হঠাৎ ভিসি বাসভবনের দিক থেকে কিছু লোক আসে এবং আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা আশ্রয়ের জন্য লাইব্রেরিতে ঢুকলেও সেখানেও হামলা হয়।”
হামলাকারীদের পরিচয় নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এরা মূলত ছাত্রদলের কর্মী ও স্থানীয় টোকাই ছিল, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে হামলা চালিয়েছে এবং লাইব্রেরিতে ভাঙচুর করেছে।
ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালান।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা আট ঘণ্টা ধরে মিলনায়তনে অবরুদ্ধ ছিলাম। পরে অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে আমাদের বের করে। বহিরাগতরা হামলা চালিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নই। তবে আমাদের আটক করে রাখার ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবে না।”
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, “আমি সবচেয়ে শেষে বের হয়েছি। বাইরে কয়েকজন লাঠিধারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। তবে তারা বহিরাগত নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী—তা শনাক্ত করতে পারিনি, কারণ তখন রাত গভীর হয়ে গিয়েছিল।”
শিক্ষার্থীদের দাবি, এই হামলার সঙ্গে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ আছে। তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। অন্যথায় আন্দোলন আরও বিস্তৃত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এ ঘটনায় পুরো বাকৃবি ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।