সর্বশেষ

জাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বর্জনের ঘোষণা একাধিক প্যানেলের

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:১৬
“এটি কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচন, শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতিফলন ঘটছে না।”
জাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বর্জনের ঘোষণা একাধিক প্যানেলের
অনিয়মের প্রতিবাদে ভোট বর্জন করেছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খানসহ জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের তিন সদস্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, প্রশাসনের পক্ষপাত এবং ছাত্রশিবিরের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে একে একে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থী শিক্ষার্থীদের প্যানেল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ‘সংশপ্তক পর্ষদ’। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের তিন শিক্ষকও একই অভিযোগে কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন।

 

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলে বামপন্থী শিক্ষার্থীদের সমর্থিত প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্য। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান বলেন, “ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের মধ্য দিয়েই অনিয়ম শুরু হয়। আজ সকালে আমাদের পোলিং এজেন্টদের বিভিন্ন হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, হেনস্তা করা হয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভোটকেন্দ্রে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা ভোটারদের হাতে চিরকুট দিয়ে প্রভাবিত করেছেন।

 

জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলার মধ্যে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বামপন্থী শিক্ষার্থীদের সমর্থিত প্যানেল সম্প্রীতির ঐক্যের প্রার্থীরা।

 

এদিকে বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় সংশপ্তক পর্ষদ প্যানেল। তাদের অভিযোগ—

  • ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে, ব্যালট উদ্ধার হয়েছে।
  • শহীদ সালাম বরকত হলে ২৯৯ ভোটারের বিপরীতে ৪০০ ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে।
  • ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় যে কেউ ভোট দিতে পেরেছে।
  • প্রতিটি হলে বহিরাগতদের উপস্থিতি ছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রশাসন ও ছাত্রশিবিরের ভোট ডাকাতির চক্রান্ত প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

 

সংশপ্তক পর্ষদ প্যানেলের লোগো

 

একই সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তাদের সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী অভিযোগ করে বলেন, “তাজউদ্দীন হলে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মেয়েদের হলে একই ভোটার বারবার ভোট দিয়েছেন। শিবিরপন্থি সাংবাদিকরা আমাদের প্রার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভোট হচ্ছে জামায়াত নেতার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ছাপানো ব্যালটে, যেখানে অতিরিক্ত ১০–২০ শতাংশ ব্যালট শিবিরকে দেওয়া হয়েছে কিনা—সে প্রশ্নও উঠছে। তাঁর ভাষায়, “এটি কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচন, শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতিফলন ঘটছে না।”

 

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী প্যানেলের পক্ষে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দে

 

শুধু শিক্ষার্থী নয়, অনিয়মের প্রতিবাদে ভোট বর্জন করেছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের তিন সদস্যও। ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, “প্রশাসন শুরু থেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করছে। এই কারচুপি-মুখর নির্বাচনের দায়ভার আমাদের নেওয়া উচিত নয়।” তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও অধ্যাপক শামীমা সুলতানা।

 

প্রচার শুরুর পর থেকেই অনিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘন, ডোপ টেস্টের স্বচ্ছতা না থাকা—এসব অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ। বৃহস্পতিবারের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তা আরও প্রকটভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করছেন বর্জন ঘোষণাকারীরা।

সব খবর