সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ায় দেশের অধিকাংশ সরকারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
৭২১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে এসব স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। একইভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও সোমবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করায় পরীক্ষা হয়নি।

‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-বাসমাশিস’ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবিগুলো হলো: সহকারী শিক্ষক পদ নবম গ্রেডে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করে গেজেট প্রকাশ, বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় শূন্যপদে নিয়োগ ও পদোন্নতি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দ্রুত দেওয়া এবং ২০১৫ সালের পূর্বের মতো সহকারী শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন সুবিধা বহাল করা।
রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরপুরের সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি, চট্টগ্রামের আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো পূরণ না হওয়ায় তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, বার্ষিক, নির্বাচনি ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই সম্পন্ন করতে হবে। ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা, ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনি পরীক্ষা এবং ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার কোনো ধরনের শৈথিল্য বা অনিয়ম হলে বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও একই পরিস্থিতি। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি হলো দশম গ্রেডে বেতন, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস অনুযায়ী একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ হলেও অন্যান্য দাবিতে অগ্রগতি না হওয়ায় তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন। নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠির বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।

তবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বারোটি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ তিন দিনের কর্মবিরতি শেষে ক্লাসে ফিরেছে এবং তারা বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছেন। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করা উচিত নয়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাঘাসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছেন এবং ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। এরপর তারা আবার অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও জানিয়েছে, বার্ষিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সব মিলিয়ে শিক্ষক আন্দোলনের কারণে দেশের অধিকাংশ সরকারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সরকার ও শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনার অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।