২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অন্তর্বর্তী সরকার বলেছিল এটি হবে ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সূচনা’। প্রবৃদ্ধি নয়, এবার বাজেটের মূল লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, সেই লক্ষ্যও অধরা। সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৮.২৯। একই সময়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৪.৬১ শতাংশ, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি তলানিতে, ফলে বেড়েছে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছেন। দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮.৭ শতাংশ। আরও ১৮ শতাংশ পরিবার রয়েছে দারিদ্র্যসীমায় নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে। নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক।
অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। এনবিআরের লক্ষ্য ছিল ৬১ হাজার কোটি, আদায় হয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার ৪২৩ কোটি। গত অর্থবছরেও রাজস্ব ঘাটতি ছিল প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ আন্দোলন ও প্রশাসনিক অচলাবস্থার কারণে রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা লেগেছে।
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫০ শতাংশের বেশি। শুধু জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনিসংকেত।
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২২ বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে মাত্র ৬.৩৫ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ সুদের হার এবং বিনিয়োগে অনীহার কারণে নতুন প্রকল্পে উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেক চালু কারখানাও আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
এডিপি বাস্তবায়নেও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২.৩৯ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২.৫৭ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক জটিলতা এ খাতে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে।
তবে একমাত্র ইতিবাচক দিক হলো রেমিট্যান্স প্রবাহ। জুলাই-আগস্টে প্রবাসী আয় বেড়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৪৮৩ মিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছর ছিল ১৯১ মিলিয়ন।
সার্বিকভাবে অর্থনীতির চিত্র বলছে বাংলাদেশ এখন এক লক্ষ্যহীন পথে হাঁটছে, যেখানে সংকটের ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে আর সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের আশাও ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে।