ভোজ্যতেলের বাজারে কয়েকদিন ধরেই অস্থিরতা চলছে। এই অবস্থার মধ্যেই বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন এবং পাম তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে লিটারপ্রতি কত টাকা বাড়বে, সেই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসায়ীরা লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় এই প্রস্তাব অনেক বেশি। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) লিটারপ্রতি প্রায় ৪ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সরকার এখন প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে এবং শিগগিরই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবার আলোচনা করে দাম পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সয়াবিন তেলের লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮৯ টাকা এবং পাম তেল ১৬৯ টাকা। পরে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর দাবি তোলে। তারা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ১ হাজার ২০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারদর সবসময় সঠিকভাবে সমন্বিত হয় না। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশীয় বাজারে প্রায়শই তার উল্টো প্রভাব পড়ে। এতে সাধারণ ভোক্তারা ক্রমাগত ভোগান্তির মুখে পড়েন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারও দাম কিছুটা বাড়াতে রাজি আছে। তবে মিল মালিকদের প্রস্তাবিত ১০ টাকা নয়, বরং সীমিত পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এই হিসাব যাচাই-বাছাই করছে মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন।
একটি পরিশোধন কারখানার প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে সম্ভাব্য মূল্যসীমা জানিয়ে দিয়েছে। এখন দাম ঘোষণা করার দায়িত্ব মিল মালিকদের। তবে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে অনড় থাকায় আলোচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
অর্থনীতিবিদ ও ভোক্তা অধিকার কর্মীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে ঘন ঘন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো সাধারণ মানুষের জন্য চাপ তৈরি করছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যে দামের ওঠানামা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে সরাসরি আঘাত করছে।
অতএব, সরকার ও ব্যবসায়ীদের আলোচনার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছেন দেশের কোটি ভোক্তা। লিটারপ্রতি ভোজ্যতেলের দাম শেষ পর্যন্ত কত বাড়বে, সেটিই এখন সবার প্রধান প্রশ্ন।