সর্বশেষ

যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ ১৮ হাজার কর্মীর বোঝা সামলানো প্রধান চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৮
যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’  ১৮ হাজার কর্মীর বোঝা সামলানো প্রধান চ্যালেঞ্জ

আর্থিক সংকটে থাকা পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত করে নতুন সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’, এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন ব্যাংকের সংঘবিধি ও সংঘস্মারক আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ভেটিং সম্পন্ন হলে আরজেএসসিতে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে লাইসেন্সের আবেদন জমা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে মূলধন সরবরাহ শুরু হবে।

 

১৮ হাজার কর্মীই সবচেয়ে বড় চাপ

 

একীভূত পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ১৮ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন। এ বৈশাল্যই নতুন ব্যাংকের জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিসাব অনুযায়ী শুধু বেতন-ভাতাতেই বছরে প্রায় ১,৯৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন পরিচালন খরচ। ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা যেখানে আগেই দুর্বল, সেখানে এই কর্মী ব্যয় টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে শঙ্কা রয়েছে।

 

ব্যাংকগুলোর ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী—

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৫,৯৯৬ কর্মী,
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৪,০৩৯ জন,
  • এক্সিম ব্যাংকে ৩,৪৮৭ জন,
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ২,৪৮৬ জন
  • এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে রয়েছে ২,০৭৩ কর্মী।

নতুন ব্যাংক সরকারিভাবে পরিচালিত হবে বলেই কর্মীদের চাকরির মর্যাদা ও সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শুরুতে তাঁরা সরকারি ব্যাংকের কর্মী হিসেবে বিবেচিত হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকটিকে পুনরায় বেসরকারি খাতে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান ও সুবিধাদি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, কোন শাখা থাকবে, কোনটি স্থানান্তর হবে এবং কত কর্মী ধরে রাখা সম্ভব এসব নিয়ে পুনর্গঠনের খসড়া তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।

 

বড় মূলধন, বড় ঝুঁকি

 

নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে:

  • ১০ হাজার কোটি টাকা নগদ,
  • ১০ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ড,
  • ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের বেইল-ইন প্রক্রিয়ায় শেয়ার রূপান্তর।

চলতি বাজেটে ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, শুধু ব্যয় নয়, সরকারি মালিকানার কারণে নতুন ব্যাংকের প্রতি আস্থা বাড়বে এবং আমানত ফেরত আসবে এটাই তাদের আশা।

 

তবে বিশাল দায়, খেলাপি ঋণ ও সঞ্চিতি ঘাটতি মিলিয়ে ব্যাংকগুলোর আর্থিক রূপ খুব একটি অনুকূল নয়। উদাহরণ হিসেবে—

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৫,৯২০ কোটি টাকা,
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৩,৬৩৩ কোটি টাকা,
  • এক্সিম ব্যাংকের ১৪,৯০৩ কোটি টাকা,
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১৩,৮৮০ কোটি টাকা।

সঞ্চিতি ঘাটতিও বিরাট অঙ্কে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মী ব্যয় এবং আমানত ফেরত দেওয়ার চাপ সামাল দিতে না পারলে সরকারের দেওয়া মূলধনই শেষ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

 

আমানত ফেরত হবে প্রথম অগ্রাধিকার

 

নতুন ব্যাংক চালুর পর ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বড় আমানতকারীদের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে নিষ্পত্তির পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য নতুন ব্যাংকের অধীনে সম্পদ ও দায় হস্তান্তর সম্পন্ন করে একটি নতুন পর্ষদ এবং প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও এমডিরা সরে দাঁড়াবেন।

 

কবে কার্যক্রম শুরু?

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “সরকার তাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রস্তুত। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই নতুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।”

 

সরকার ইতোমধ্যে আট সদস্যের ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে। ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহাম্মদের নেতৃত্বে কমিটি ব্যাংক একীভূতকরণের পূর্ণ রোডম্যাপ তৈরি করছে।

 

শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জই বড়

  • ৫ ব্যাংকের ৭৬১টি শাখা কিভাবে পুনর্বিন্যাস হবে,
  • ১৮ হাজার কর্মীর কতজন রাখা যাবে,
  • খেলাপি ঋণ আদায় ও সঞ্চিতি ঘাটতি পূরণ কত দ্রুত সম্ভব,
  • আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে আসবে কিনা

এসব প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ টিকবে নাকি আবারও সরকারের ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

 

তবে সরকারের আশা একীভূতকরণ শেষ হলে আর্থিক সুশাসন নিশ্চিত হবে, আমানত পুনর্গঠন হবে, আর ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরবে।

সব খবর

আরও পড়ুন

নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত

১২ মাসে ১৮২ কারখানা বন্ধ, কর্মসংস্থানে ধস নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত

নাজুক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চলতি ব্যয় মেটাতেও ঋণের ওপর নির্ভরশীল

তীব্র অর্থ সংকটে অন্তর্বর্তী সরকার নাজুক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চলতি ব্যয় মেটাতেও ঋণের ওপর নির্ভরশীল

সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিতে বিপর্যয়ে বেসরকারি খাত

ভোটের আগে অর্থনীতিতে সতর্কতা সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিতে বিপর্যয়ে বেসরকারি খাত

কোভিডকালের চেয়েও নিচে নেমে গেছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি

অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্য অনাস্থা কোভিডকালের চেয়েও নিচে নেমে গেছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি

ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে আইসিএসআইডি-তে এস আলম গ্রুপের সালিশি আবেদন

ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে আইসিএসআইডি-তে এস আলম গ্রুপের সালিশি আবেদন

ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী ও উপপ্রেস সচিবের বক্তব্যে বিজিএমইএ’র তীব্র প্রতিবাদ

পোশাক শিল্পকে ‘অবমূল্যায়ন’ ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী ও উপপ্রেস সচিবের বক্তব্যে বিজিএমইএ’র তীব্র প্রতিবাদ

৭৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না

বিএলএফের গবেষণা ৭৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না

আয় কমছে, ব্যয় বাড়ছে, সংকটে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত

জীবনযাত্রায় ভয়ানক চাপ আয় কমছে, ব্যয় বাড়ছে, সংকটে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত