সর্বশেষ

বিনিয়োগে অনিশ্চয়তার ছায়া

এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এফডিআই কমেছে ৬১ শতাংশ

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এফডিআই কমেছে ৬১ শতাংশ

২০২৫ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের পতন ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ সময়ে নিট এফডিআই প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার ডলার, যা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের ৭৮ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ডলারের তুলনায় ৬১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এক্সটারনাল ডেট ম্যানেজমেন্ট (FIED) সেলের তথ্য অনুযায়ী, ইকুইটি, পুনর্বিনিয়োগ (Reinvested Earnings) এবং আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ সব ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ প্রবাহ কমেছে। যদিও আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৫ সালের এপ্রিল-জুনে নিট এফডিআই ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু সেই বৃদ্ধির প্রধান উৎস ছিল বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর পুনর্বিনিয়োগ, নতুন মূলধন নয়।

 

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ

 

বিডার মুখপাত্র ও হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রোচি জানান, “২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য পরিবেশে অনিশ্চয়তা বিরাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, রেড সি ও পানামা খালে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন, এবং বিভিন্ন দেশে রফতানিমুখী শুল্কনীতির পরিবর্তন এসব কারণে বৈশ্বিকভাবে সরবরাহ চেইনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “এর ফলে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি তাদের নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা স্থগিত বা পুনর্মূল্যায়ন করেছে। এতে গ্রিনফিল্ড ইকুইটি বিনিয়োগে সাময়িক মন্দা দেখা গেছে।”

 

 

রোচি এফডিআই প্রবাহে সিজনালিটি ইমপ্যাক্ট এর কথাও উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, “অনেক সময় বছরের প্রথম প্রান্তিকে বড় অঙ্কের এককালীন ইকুইটি বা ঋণ আসে, যা পরবর্তী প্রান্তিকে তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়।”

 

বিনিয়োগকারীদের ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থান

 

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জের কারণে বিনিয়োগকারীরা আপাতত সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি তারেক রফি ভূঁইয়া বলেন, “জাপান ও অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এখনো আছে, কিন্তু তারা ওয়েট অ্যান্ড সি অবস্থায় রয়েছে। একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হলে তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে।”

 

তিনি আরও জানান, “আমরা সম্প্রতি টোকিও ও ওসাকায় সেমিনার করেছি, যেখানে শতাধিক জাপানি বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন। তাদের আগ্রহ আছে, কিন্তু তারা পলিসি স্ট্যাবিলিটি চান।”

 

মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরাও একই মনোভাব পোষণ করছেন। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাব্বির এ খান বলেন, “রবি ও ইডটকোসহ মালয়েশিয়ার বড় বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে অপেক্ষা করছেন বিনিয়োগ পরিবেশের স্থিতিশীলতার জন্য।”

 

বিশ্লেষকদের সতর্কতা

 

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “৬১ শতাংশ পতন একটি গুরুতর সংকেত, যা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ও সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নতুন ইকুইটি বিনিয়োগ ৬২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কমে গেছে, যা উদ্বেগজনক।”

 

তিনি মনে করেন, “এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শুধু নীতিগত নয়, কাঠামোগত সংস্কারও প্রয়োজন। এখনো অনেক প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ, যা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে।”

 

প্রয়োজন নীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কার

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এফডিআই বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশে মৌলিক পরিবর্তন জরুরি। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো দ্রুত কার্যকর করা, শুল্কনীতি সহজ করা, ডিরেগুলেশন ও কর কাঠামোয় স্বচ্ছতা আনা এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

এফআইসিসিআই’র সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, “এফডিআই হ্রাস অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। তবে আমরা বিশ্বাস করি, সরকারি নীতির স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে বাংলাদেশ আবারও বিদেশী বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হবে।”

সব খবর

আরও পড়ুন

নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত

১২ মাসে ১৮২ কারখানা বন্ধ, কর্মসংস্থানে ধস নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত

নাজুক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চলতি ব্যয় মেটাতেও ঋণের ওপর নির্ভরশীল

তীব্র অর্থ সংকটে অন্তর্বর্তী সরকার নাজুক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চলতি ব্যয় মেটাতেও ঋণের ওপর নির্ভরশীল

সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিতে বিপর্যয়ে বেসরকারি খাত

ভোটের আগে অর্থনীতিতে সতর্কতা সংকোচনমুখী মুদ্রানীতিতে বিপর্যয়ে বেসরকারি খাত

কোভিডকালের চেয়েও নিচে নেমে গেছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি

অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্য অনাস্থা কোভিডকালের চেয়েও নিচে নেমে গেছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি

ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে আইসিএসআইডি-তে এস আলম গ্রুপের সালিশি আবেদন

ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে আইসিএসআইডি-তে এস আলম গ্রুপের সালিশি আবেদন

ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী ও উপপ্রেস সচিবের বক্তব্যে বিজিএমইএ’র তীব্র প্রতিবাদ

পোশাক শিল্পকে ‘অবমূল্যায়ন’ ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী ও উপপ্রেস সচিবের বক্তব্যে বিজিএমইএ’র তীব্র প্রতিবাদ

যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’  ১৮ হাজার কর্মীর বোঝা সামলানো প্রধান চ্যালেঞ্জ

যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ ১৮ হাজার কর্মীর বোঝা সামলানো প্রধান চ্যালেঞ্জ

৭৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না

বিএলএফের গবেষণা ৭৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না