প্রায় চার দশক পর চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবা খাতে ট্যারিফ (মাশুল) বাড়ানো হয়েছে। নতুন ট্যারিফ অনুযায়ী গড়ে ৪১ শতাংশ হারে খরচ বেড়েছে, যা সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বন্দরের ৫২টি সেবা খাতের মধ্যে ২৩টিতে সরাসরি ট্যারিফ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে বন্দরের সেবামূল্য বাড়ানো হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পর অন্তর্বর্তী সরকার এই উদ্যোগ নেয়।
বন্দর ব্যবহারকারীরা একসঙ্গে এত বড় হারে মাশুল বৃদ্ধির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। গত ২৪ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত ট্যারিফ অনুমোদন দেয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে একদফা আলোচনা হলেও, তাদের আপত্তি আমলে না নিয়েই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার ও পণ্য পরিবহনের ৯৮ শতাংশ পরিচালনা করে। ফলে ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি পড়বে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ট্যারিফ বেড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাতে। প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারের ট্যারিফ ১১,৮৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬,২৪৩ টাকা—যা গড়ে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি। এছাড়া আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫,৭২০ টাকা এবং রফতানি কনটেইনারের জন্য ৩,০৪৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার খরচ বেড়েছে প্রায় ৩,০০০ টাকা। কনটেইনারে প্রতি কেজি পণ্যের জন্য ট্যারিফ ১.২৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৭৫ টাকা।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, এই ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে আমদানি-রফতানি খরচ বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন ইতোমধ্যে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। তারা বলছেন, ট্যারিফ বৃদ্ধির আগে আরও বিস্তৃত আলোচনা ও সময় দেওয়া উচিত ছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত থাকা ট্যারিফ কাঠামো হালনাগাদ করা জরুরি ছিল। তবে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে তারা জানিয়েছে, প্রয়োজনে ভবিষ্যতে ট্যারিফ পুনর্মূল্যায়ন করা হতে পারে।