বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাসের ধারাবাহিকতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থমকে গেছে। সামাজিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গত ১৬ মাসের অবনতিতে সামগ্রিকভাবে ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের প্রান্তিকে দেশে দারিদ্র্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২১ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
২০০০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এক দশক পর ২০১০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে। ২০২২ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার আরও কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে দুর্বল শ্রম আয়, চাকরি হারানো এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দারিদ্র্য আবারও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। গত দেড় বছরে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কাছাকাছি চলে এসেছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘গ্রামীণ জীবিকা পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সহনশীলতা উদ্যোগ’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এসডিএফের সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, মানুষের জীবনযাত্রার মান ও আয়ের পরিবর্তন বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, গত দেড় বছরে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। এটি একটি সংকেত যে বর্তমান কৌশলগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে কি না তা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৯৫টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করতো যার মধ্যে রয়েছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মা ও শিশু সুবিধা এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোর মাত্র ৩৭ শতাংশ সরকারি অনুদান পাচ্ছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে সকল সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। তবে ২০২২ সাল থেকে প্রবণতা বিপরীত হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় দারিদ্র্য নিরসন কাজ আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। তিনি উদ্যোক্তা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, স্বনির্ভরতা অর্জন করলে তা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং কর্মসংস্থান বাড়ায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার।