সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে—চীন ও ভারতের পরেই। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে সবজি উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৯০ হাজার টন, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় ১৫.২৯ শতাংশ বেশি। অথচ বাজারে দাম এখনো আকাশছোঁয়া, ভোক্তারা রয়েছেন চরম অস্বস্তিতে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই, তবু বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা—এই দাম শুনে ক্রেতাদের কপালে ভাঁজ। মিরপুরের গৃহিণী রুবিনা বেগম বলেন, “সব জায়গায় শুনি রেকর্ড উৎপাদনের খবর, কিন্তু বাজার খরচ তো কমছে না, বরং বাড়ছে।”
মানিকগঞ্জের কৃষক আবদুল কাদের জানান, ধানের চেয়ে সবজিতে লাভ বেশি হওয়ায় তিনি এখন বেগুন, শসা, লাউ চাষ করছেন। তবে দালাল ও পরিবহন খরচে প্রকৃত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি, হাইব্রিড জাত, বাড়ির আঙিনায় চাষ এবং সর্ব-মৌসুমি উৎপাদনের ফলে এই অগ্রগতি এসেছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, “সবজি এখন নগদ ফসল, চাহিদা ও পুনঃচাষের সুযোগে উৎপাদন বেড়েছে।”
দেশে প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমিতে ১০০ ধরনের সবজি চাষ হয়। জনপ্রিয় সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, টমেটো, লাউ, ঢ্যাঁড়শ, শিম, গাজর, পালং শাক, কচু ইত্যাদি। এসব সবজিতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ, যা খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য আনছে।
রপ্তানিও বাড়ছে, তবে দেশের বাজারে দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। আড়তদার ও কমিশন এজেন্টদের চক্র ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান না, শহরের মানুষ ১০ গুণ বেশি দামে সবজি কিনছে। মোবাইল কোর্ট বা অভিযান এখন আর হয় না বললেই চলে।”
বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, “উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণহীন। অবস্থান নয়, আসল প্রশ্ন—চাহিদার তুলনায় জোগান কতটা নিশ্চিত হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপাদনের সুফল ভোক্তার পাতে পৌঁছাতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় সংস্কার এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। না হলে এই সাফল্য শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ থাকবে।