সর্বশেষ

বৈদেশিক ঋণে রেকর্ড

৩ মাসে নতুন ঋণ ৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার, সমালোচনায় দ্বিমুখী অবস্থান ইউনূস সরকারের

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১৮
৩ মাসে নতুন ঋণ ৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার, সমালোচনায় দ্বিমুখী অবস্থান ইউনূস সরকারের

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে জুন প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছে ১১২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা তিন মাস আগের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সরকারি খাতেই ঋণ বৃদ্ধির বড় অংশ গেছে, আর বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ না থাকায় এ খাতে ঋণ সামান্য কমেছে।

 

গত জুনেই বাংলাদেশ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি ও জাপানসহ একাধিক সংস্থা থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে। শুধু আইএমএফ থেকেই এসেছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও এআইআইবি থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে এসেছে আরও প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। এসব অর্থ সরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণে যুক্ত হয়েছে।

 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ঋণের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে তা অর্থনীতির জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “উচ্চ সুদহার ও স্বল্প গ্রেস পিরিয়ডের কারণে ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই প্রতিটি প্রকল্প সতর্কভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।” সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনও একই মত দেন—“ঋণ উৎপাদনশীল খাতে না গেলে পরিশোধের সময় তা হবে দেশের জন্য চাপ।”

 

তবে এই ঋণ প্রবাহকে ঘিরে রাজনৈতিক সমালোচনায় এসেছে বৈপরীত্য। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতাকে বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ নীতিনির্ধারকেরা বারবার সমালোচনা করেছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, অতিরিক্ত ঋণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দায়ে ফেলবে এবং প্রকল্পগুলো অকার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু এখন নিজেরাই মাত্র তিন মাসে রেকর্ড পরিমাণ নতুন ঋণ নিয়েছেন, যা তাদের পূর্ববর্তী সমালোচনার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, জুন শেষে সরকারি খাতে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৩৮ কোটি ডলার, যা তিন মাস আগে ছিল ৮ হাজার ৪৯২ কোটি ডলার। অপরদিকে বেসরকারি খাতের ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। নতুন বিনিয়োগে অনাগ্রহ এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ব্যবসায়ীরা বিদেশি ঋণ নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন।

 

জুন শেষে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে, যার বড় অংশই এই ঋণের ডলারে। ঋণের ডলার দেখিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো অনেকটা শেয়ালের একই কুমিরের বাচ্চা বারবার দেখানোর মতো চতুরতা বলে সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা।

 

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, ঋণ যদি সঠিক খাতে ব্যবহার না হয় তবে তা অর্থনীতিকে দুর্বল করবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বর্তমান সরকারের অবস্থান অতীতের সমালোচনার বিপরীত হওয়ায় স্পষ্টতই একটি দ্বিমুখী অবস্থান প্রকাশ করছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

২০২২-২০২৫ প্রান্তিকে দেশে দারিদ্র্য বাড়তে পারে ২ দশমিক ৫ শতাংশ

১৬ মাসে ভয়াবহ অবনতি ২০২২-২০২৫ প্রান্তিকে দেশে দারিদ্র্য বাড়তে পারে ২ দশমিক ৫ শতাংশ

দূর্বল হয়ে পড়ছে অর্থনীতির প্রধান চার খাত

পিএমআই স্কোরে বড় ধস দূর্বল হয়ে পড়ছে অর্থনীতির প্রধান চার খাত

কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বাড়ছে কিন্তু ব্যাংক খাতে উধাও ৫৯ হাজার কোটি টাকা

আমানতের রহস্যজনক পতন কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বাড়ছে কিন্তু ব্যাংক খাতে উধাও ৫৯ হাজার কোটি টাকা

রপ্তানি আয়ে টানা চার মাস ধরে পতন অব্যাহত

নভেম্বরে কমল আরও ৬ শতাংশ রপ্তানি আয়ে টানা চার মাস ধরে পতন অব্যাহত

সবজির বাজারও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে

পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা ছাড়ালো সবজির বাজারও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে

ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়া থেকে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি নেই

ইআরডির জুলাই-অক্টোবর প্রতিবেদন ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়া থেকে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি নেই

ক্রমশ জটিল হয়ে যাচ্ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতা বাড়ার শঙ্কা ক্রমশ জটিল হয়ে যাচ্ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ

ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন সংকট বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ