সারা দেশে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটছে। বেসরকারি সংস্থার হিসাব বলছে, খুনের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। এসব নৃশংস ঘটনার সঙ্গে মাদক জড়িত বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তাদের মতে, মাদকাসক্তরা মানবিক চেতনা হারিয়ে ফেলে এবং ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
সম্প্রতি রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুলকে তার বন্ধু জরেজ মিয়া শনিরআখড়ায় বান্ধবীর বাসায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। লাশ ২৬ টুকরা করে ড্রামে ভরে ফেলে দেওয়া হয়। চাঁদপুরে পারিবারিক বিরোধে ছেলে বাবাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে। খুলনায় আদালতের সামনে দুই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়, যারা স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপের সদস্য ছিলেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে প্রায় রাতেই মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোলাগুলি ও বোমাবাজি হচ্ছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও মাদকাসক্ত অবস্থায় অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, মাদক প্রতিরোধে রাষ্ট্রের জিরো টলারেন্স ঘোষণা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দেশের আনাচে-কানাচে মাদকের বাজার গড়ে উঠেছে, যা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, শিক্ষার্থীদের বড় অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় যোগ্য ও মেধাবী লোকের সংকট দেখা দেবে। অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগামী ছাত্রদের মধ্যে ইয়াবা আসক্ত কম নয়। খুনিদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায় না।
রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় মাদক পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ইয়াবা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলেও মাদক সরবরাহ বাড়ছে, যার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্ত দিয়ে প্রচুর ইয়াবা আসছে। প্রতিদিন উদ্ধার হওয়া মাদক আসা পরিমাণের তুলনায় খুবই কম।
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান জানিয়েছেন, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে গত এক সপ্তাহে ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডির প্রধান মো. ছিবগাতউল্লা বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক নির্মূল ছাড়া দেশে নৃশংস অপরাধ কমানো সম্ভব নয়।