সর্বশেষ

নদী থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৪৩ মরদেহ উদ্ধার, দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৪৫
"নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার হলে, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা। অনেক মরদেহ পচে যাওয়ায় শনাক্ত করা যায় না, আবার কখনো কখনো মরদেহ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলে যায়।"
নদী থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৪৩ মরদেহ উদ্ধার, দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা

বাংলাদেশে নদী এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষত রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের মতো শহরগুলোতে এ ধরনের ঘটনা ঘনবসতিপূর্ণ হয়েছে। অপরাধীরা এখন নদীকে একে একে হত্যার প্রমাণ লোপাট এবং আইনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করছে। পুলিশ এবং অপরাধ তত্ত্ববিদরা বলছেন, এটি একটি ভয়ংকর ট্রেন্ড, যা অপরাধীদের আরও সাহসী করে তুলছে।

 

গত ২৩ আগস্ট বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় দুইটি মরদেহ—একটি নারী এবং একটি শিশু। পুলিশ জানায়, তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং পরে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ময়নাতদন্তে বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশের মতে, হত্যাকারীরা প্রমাণ নষ্ট করার জন্য মরদেহ নদীতে ফেলে দিয়েছিল।

 

প্রতিদিনই এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত, বাংলাদেশে প্রায় ৩০১টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে ৩৪টি এবং ঢাকায় ৩২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বছরও নদী থেকে ৪৪০টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল, যার মধ্যে অনেকের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি।

 

এ ধরনের ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা। পুলিশ জানায়, নদীতে মরদেহ পচে গিয়ে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে মরদেহ পানিতে ভাসতে ভাসতে বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে পারে, যার ফলে নিহত ব্যক্তির পরিবারও তাদের প্রিয়জনের খবর পায় না। এই পরিস্থিতি তদন্তে অগ্রগতি নষ্ট করে এবং প্রমাণ নষ্ট করে দেয়।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে অপরাধীরা হত্যার পর প্রমাণ লোপাটের জন্য নদী ব্যবহার করছে, অন্যদিকে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তারা স্থির করে নেয় কোথায় মরদেহ ফেলা হবে। নদী এবং রেলপথ সাধারণত প্রমাণ নষ্টের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা একটি মারাত্মক বিপদ।

 

ঢাকা জেলা নৌ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, "যখন আমরা মরদেহ শনাক্ত করতে পারি না এবং দীর্ঘ সময় পরও মামলার অগ্রগতি হয় না, তখন আমরা অন্য সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দেই অথবা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেই।" তবে তিনি জানালেন, তারা কখনোই ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে কোনো ব্যক্তি মরদেহ শনাক্ত করতে এলে তা মেলানো যায়।

 

নৌ পুলিশ প্রধান কুসুম দেওয়ানও এই ধরনের ঘটনার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার হলে, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা। অনেক মরদেহ পচে যাওয়ায় শনাক্ত করা যায় না, আবার কখনো কখনো মরদেহ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলে যায়।"

 

এই পরিস্থিতি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অপরাধীদের স্বাভাবিক গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য এই পন্থা তারা নিয়মিত ব্যবহার করে আসছে। তবে, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুরাহা এবং প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে তদন্তের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

সব খবর

আরও পড়ুন